ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জামায়াত-শিবির-জেএমবি’র আশ্রয়দাতা এমপি এনামুল 

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৭
জামায়াত-শিবির-জেএমবি’র আশ্রয়দাতা এমপি এনামুল  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাগমারা (রাজশাহী) থেকে ফিরে: ১৯৯১ সালে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছিলেন আব্দুল আহাদ কবিরাজ। তাকেই ঝাড়গ্রাম মাদ্রাসার সভাপতি করেছেন ডিও দিয়ে। খোদ রাজশাহী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এলাহী বক্সকে সালেহা ইমারত ডিগ্রি কলেজের সভাপতি করেছেন এমপি এনামুল হক।

উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারিকে নিয়োগ দিয়েছেন যাত্রাগাছি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে। বিএনপি-জামায়াতের লোকদের পুনর্বাসনের এ রকম অসংখ্য নজির রয়েছে বাগমারায়।

শুধু জামায়াত-বিএনপির  পুনর্বাসনই নয়, জঙ্গিগোষ্ঠি জেএমবির লোকজনকে পুনর্বাসনেরও রেকর্ড গড়েছেন রাজশাহীর বাগমারা আসনের এমপি এনামুল হক।  

এমপি তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়েছেন বাংলাভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে কথিত একজনকে। যার সঙ্গে বাংলাভাইয়ের একাধিক গ্রুপ ছবি রয়েছে। যাকে বাংলাভাইয়ের টর্চার ক্যাম্প (হামিরকুৎসা সর্দারপাড়া গ্রাম) রহমান ক্যায়ের বাড়িতে বৈঠক করতে দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

এক সময় যাদের কারণে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ছিল এলাকাছাড়া, এখন তাদেরই এমপি এনামুল হক ছায়া দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছেন; আর দূরে সরিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের। এ কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে এনামুল হককে প্রার্থী করা হলে চরম মাসুল দিতে হতে পারে বলে মনে করছেন এখানকার মানুষ।  

তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদেরও তেমনই অভিমত, ‘এনামুল হককে প্রার্থী করা হলে নৌকার চরম ভরাডুবি হবে। এনামুল হক তার মেয়াদের পুরোটা সময় জামায়াত-শিবিরকে পুনর্বাসন করেছেন। ’ 

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাইড লাইনে বসিয়ে রাখার কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার ওপর যারপরনাই নাখোশ। আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে তিনি জামায়াত-শিবির ও পারিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। স্বজনতোষণ আর জামায়াত-শিবির তোষণ এজেন্ডার অংশ হিসেবেই এদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন বলে দাবি মেয়র আবুল কালাম আজাদের।

মেয়র বলেন, ‘বাগমারায় সবচেয়ে ভালো আছে কেবল জামায়াতের লোকজন। তাদের নামে এই সাড়ে আট বছরে কোনো মামলা হয়নি। অথচ মামলা হয়েছে কেবল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অথচ অনেক মিথ্যা মামলায় আওয়ামী লীগের লোকজনই আজ এলাকাছাড়া। ’

এমপির এহেন স্বজনতোষণে ক্ষুব্ধ দলের অনেকে। তার ভাইয়ের ভায়রা, বড় ভাইয়ের শ্যালক, দুলাভাই, বড় ভাই ও স্ত্রীসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজনকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বানিয়েছেন ডিও দিয়ে। অনেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি করা হয়েছে যাদের অনেকেই ভিন্ন মতাদর্শ লালন করেন। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির একটু বেশিই প্রাধান্য পেয়েছে। এ কারণে প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা এমপি এনামুল হকের উপর চরম ক্ষুব্ধ বলে দাবি করলেন মেয়র আবুল কালাম আজাদ।

আর এমপি এনামুলের বিরুদ্ধে জেএমবি-সর্বহারা-জামায়াত-শিবিরকে আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগ তুলে ১৩ নম্বর গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার বলেন, তিনি জামায়াত, শিবির, বিএনপি, এমনকি জেএমবি ও সর্বহারার আশ্রয়দাতা। বর্তমানে তার ঢাকার অফিসে বাগমারার জেএমবি-সর্বহারার তালিকাভূক্ত লোকজন থাকে। জামায়াত-বিএনপির লোকদের সঙ্গে তার ওঠা-বসা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই বাংলানিউজকে জানান, এনামুল হক কখনোই এলাকায় সক্রিয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সবাইকে অবাক করে হঠাৎই তাকে মনোনয়ন দিয়ে বসে আওয়ামী লীগ। এরপর আওয়ামী লীগের মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু এরপর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে, পাশ কাটিয়ে চলছেন তিনি।  

এমপির মতাদর্শ নিয়েও এলাকায় রয়েছে নানা রকম গুঞ্জন। অনেকে দাবি করেছেন, তিনি (এমপি এনামুল) বগুড়া পলিটেকনিক্যাল কলেজে পড়ার সময় শিবিরের শেল্টারে ছিলেন। সে কারণে কখনই তিনি মনেপ্রাণে  আওয়ামী লীগার ছিলেন না, সুযোগ বুঝে অনুপ্রবেশ করেছেনমাত্র। একারণে আওয়ামী লীগের পরিবর্তে জামায়াত-শিবির-বিএনপির লোকজনকে পুনর্বাসন করে চলেছেন আর আওয়ামী লীগের মতাদর্শের লোকদের কোনঠাসা করে রেখেছেন।

সরকার দলীয় এই এমপির বিরুদ্ধে তার দলের লোকেরাই ব্যাপক নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন। এক তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজ থেকেই নিয়োগবাণিজ্যের মাধ্যমে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কলেজটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন এনামুল হক নিজে।

কলেজটিতে সাড়ে ৮ বছরে শূন্য পদে ৩৬ জনসহ মোট ৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে দশ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়ের অভিযোগ করেছেন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ।  

এখানে রয়েছে একটি মাদ্রাসা যেখানে গণহারে জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য অনেকবার ফোনকল দিলেও তা রিসিভ করেননি এমপি এনামুল হক। এমনকি এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি তার। পরে তার প্রতিষ্ঠান এনা গ্রুপের জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে মেইলে বক্তব্য চাওয়া হয়।  

জনসংযোগ কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান মেইলে এসব প্রশ্নের বিষয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৭
এসআই/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।