ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কোরবানিতে মৌসুমি কসাইয়েই ভরসা!

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৭
কোরবানিতে মৌসুমি কসাইয়েই ভরসা! কোরবানিতে মৌসুমি কসাইয়েই ভরসা!- ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: ‘একমাত্র ছেলে ঢাকা থেকে এসেছে ঈদ করতে। আত্মীয়-স্বজন যে, যার মতো কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত। বাড়িতে আর কোনো লোকও নেই। কি আর করা! বাধ্য হয়েই মৌসুমি কসাই ভাড়া করতে হয়েছে। গরুর চামড়া ছাড়ানো আর মাংস তৈরির জন্য ঈদুল আজহার এই দিনে তারাই ভরসা’।

কথাগুলো বলছিলেন শালবাগান এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী মোকলেসুর রহমান। তবে কেবল মকলেসুর রহমানই নন, শহরে ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ পরিবারই ভাড়া করেছেন মৌসুমি কসাই।

তাই মৌসুমি কসাইয়ের কদর এখন তুঙ্গে। আগে বুকিং না থাকলে ফোন দিয়েও মিলছেনা তাদের।

আর যাদের আগে থেকেই ভাড়া করা আছে তাদের কোনো টেনশনই নেই। ধারালো ছুরি-চাকু ও চাপাতির পুরো প্যাকেজ নিয়ে সাত সকালেই তারা বাড়ির আঙ্গিনায় হাজির। চোখের পলকে চামড়া ছাড়ানো এবং কোরবানির মাংস তৈরির কাজ করছেন তারা। এজন্য যারা মৌসুমি কসাই ভাড়া করছেন তাদের কোরবানির কাজ অন্যদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে আগে হতে দেখা যাচ্ছে।
কোরবানিতে মৌসুমি কসাইয়েই ভরসা!- ছবি: বাংলানিউজ
মহানগরীর শিরোইল এলাকার অধিবাসী আরাফাত রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কখনোই ছুরি-চাকুতে হাতই দেননি তিনি। এজন্য পশু কোরবানি, চামড়া ছাড়ানো ও মাংস তৈরির কাজ তার জন্য অসম্ভব একটা ব্যাপার। তাই মৌসুমি কসাই ভাড়া করেছেন। একজন মূল কসাইয়ের সঙ্গে সহযোগী রয়েছেন আরও দুজন। এই তিনজনকে তাদের কাজের পারিশ্রমিক হিসাবে দিতে হচ্ছে দু্ই হাজার টাকা এবং ছয় কেজি মাংস।

তবে এর বিনিময়ে তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোরবানির সব কাজ শেষ করে দিচ্ছেন। মাংস তৈরির পর ওজন দেওয়া এবং ভাগ পর্যন্ত করে দিচ্ছেন তারা। হাতই দিতে হচ্ছেনা বলেও জানান আরাফাত।

এদিকে, মহানগীর নিউ কলোনি থেকে কোরবানির কাজ করতে আসা মহসিন আলী কসাই বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির দিন তার নিজস্ব মাংসের ব্যবসা বন্ধ। তাই এদিনটি তিনি ও তারা দুই সহযোগী মিলে অন্যদের কোরবানির কাজে সহায়তা করছেন। এজন্য কোনো নির্ধারিত রেট নেই।

মানুষ বুঝে যার কাছে যেমন পাওয়া যায় তেমনই নেওয়া হয়। তবে সাধারণত দুই হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। গরু অনুযায়ী রেট।  

শনিবার (০২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের তিন বাড়িতে যাওয়া কথা রয়েছে। একটি সকালে ৯টার মধ্যে শেষ হয়েছে। একটি চলছে। আর তৃতীয়টি বেলা সাড়ে ১২টার থেকে দুপুর ১টার মধ্যেই যাবেন কথা দিয়েছেন বলেও জানান কসাই মহসিন।

এক প্রশ্নের জবাবে মহসিন আলী বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত প্রথম দিনই চাপ বেশি। অনেকের একেবারেই লোকজন নেই। আবার অনেকে বড় গরু-ছাগল মিলে পর পর তিনদিন কোরবানি করেন। তাই ঈদের দিন, তার পরের দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিনও কোরবানি হয়। এজন্য তিনদিনই তাদের ব্যস্ততা থাকে।

তবে এসব কসাইদের কদর এমুহুর্তে আকাশচুম্বি। যারা দক্ষ কসই তাদের তো পাত্তা পাওয়াই দায়। এরই মধ্যে অনেকের সঙ্গে চুক্তি করে কাজ শুরু করে দেওয়ায় এখন তাদের পোয়া বারো। একেক জন দক্ষ কসাই তার ২-৩ সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে এই মহল্লা থেকে ওই মহল্লা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সকাল থেকেই।

মহানগরীর সুলতানাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী আশরাফুল হক বাংলানিজকে বলেন, সকাল থেকে তিন হাজার টাকা হাতে নিয়েও তিনি কসাই খুঁজে পাননি। অনেকের পেছন পেছন ঘুরছেন। কিন্তু সবাই ব্যস্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৭
এসএস/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।