ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কৃষকের লাভের গুড় খাচ্ছে পিঁপড়ায়!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৭
কৃষকের লাভের গুড় খাচ্ছে পিঁপড়ায়! ক্ষেত থেকে তোলা ফসল-ছবি-বাংলানিউজ

পবার কামার পারিলা (রাজশাহী) ঘুরে: রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা হাটের উদ্দেশে যাত্রা। পথেই পড়লো নিভৃত গ্রাম কামার পারিলা।পাকা রাস্তার দুপাশ জুড়েই পটলের ক্ষেতের মাচান। সেই ক্ষেত থেকে তোলা হচ্ছে তরতাজা পটল। সাত সকালে রাস্তার ওপর সবুজ ফসলের এমন সমারোহ দেখলে যে কারও নয়ন জুড়িয়ে যাবে। কিন্তু সতেজ ফসলের দাম শুনে মনটা মরা পাতার মতো কুঁকড়ে গেলো মুহূর্তেই!

যে পটল রাজশাহীর বাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি সেটি প‍ারিলায় কেনা হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ পাইকারি ১৬শ' থেকে ১৮শ' টাকা মণের পটল সরাসরি ক্ষেত থেকে ১২শ' টাকা মণ দরে কেনা হচ্ছে।

মোটরসাইকেলের মাইল মিটারে তাকাতেই সংকেত মিললো শহর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে কৃষকের ক্ষেতের পটল বাজারের ঝুড়িতে উঠতেই দাম বাড়ছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

তবে লাভের এই অঙ্ক কি কৃষকের ঘরে যাচ্ছে? না যাচ্ছে না। কারণ তিন রাস্তার মাথায় যিনি পটল কিনছেন তিনি একজন মধ্যস্বত্বভোগী। তৃণমূল কৃষকরা কেবল পরিবহনের ঝামেলা এড়াতে এই পটল ক্ষেত থেকে তুলে তার কাছে সস্তা দরে বিক্রি করছেন। আর আবদুল হালিম নামের ওই মধ্যস্বত্বভোগী কৃষকদের পটল কিনে জড়ো করে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছেন। দেখা গেলো কৃষক ফসল ফলাচ্ছেন ঠিকই তবে লাভ করছেন সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা।  

কেবল পটলই নয়, গ্রামের পেঁপে, করলা, কাঁকরোল, কাঁচামরিচ, বরবটির চাষিদেরও একই অবস্থা। আবদুল হালিমের মতো কিছু পুঁজিবাদী চক্র গ্রামে-গঞ্জে ঢুকে জমিদারি আমলের খাজনা তোলার মতো করে পানির দরে কৃষকের রক্ত-ঘাম ঝরানো ফসল কিনছেন। আর শাসন করছেন শহরের সাধারণ ক্রেতাদের।  

পটলের মাচান-ছবি-বাংলানিউজওই গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, পটলের যে, দাম তা বিক্রি করে এখন চারা, সার, কীটনাশক আর সেচের খরচই উঠছে না। লাভের বাড়ি তো আরও দূর। ঈদের আগের মাসে পবার পারিলা হাটে পটলের দাম নেমে এসেছিল ৬/৭ টাকা কেজিতে। গ্রামের অনেক কৃষক পটল তুলে গোয়ালের গরুকে খাইয়েছে। তবে ঈদের আগের সপ্তাহ থেকে আবারও পটলের দাম বেড়েছে। তাই যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়েই খরচ ওঠানোর চেষ্টা করছেন।

এর ওপর হাটে নিয়ে গেলে খাজনা ও পরিবহন খরচ লাগবে। তাই তার মতো অনেকেই সরাসরি ক্ষেত থেকে পটল তুলে মহাজন শ্রেণির ব্যবসায়ীদের কাছে কষ্টার্জিত ফসল অল্প দামে তুলে দিচ্ছেন।

আবদুল হালিম নামের ওই মধ্যস্বত্বভোগী জানান, সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার হচ্ছে হাটবার। এই দুদিন পারিলায় হাট বসে। মূলত তিনি এই দুদিনই কৃষকদের ফসল কেনেন। যখন যা পান তাই কেনেন। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) পটল পেয়েছেন। বেলা ১০টা পর্যন্ত ২০ মণ পটল কিনেছেন।  

ক্ষেত থেকে তোলা পটল কিনছেন হামিদ-ছবি-বাংলানিউজএখনও কিনে কিনে জড়ো করছেন। বিকেলে তার কাভার্ডভ্যান এসে এগুলো তুলে নিয়ে যাবে। পরে কিছু রাজশাহীর মাস্টারপাড়ার আড়তে দেবেন। আর কিছু ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাঠাবেন। সেখানে এর চেয়ে কিছু বেশি দামে বিক্রি করবেন। এটাই তার লাভ। হাটের দিন গ্রামের কৃষক ক্ষেতে বসেই ফসল বিক্রি করতে পারেন। এতে পরিবহন খরচ বাঁচে। তারও কিছু বাড়তি লাভ আসে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৭
এসএস/আরআর
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।