ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর রেখা বললেন 'ফেরদৌসির বিচার চাই'

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৭
মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর রেখা বললেন 'ফেরদৌসির বিচার চাই' হাসপাতালের বেডে রেখা বেগম

রাজশাহী: ‘ও আল্লাহ, ও আল্লাহ, ও মা...’। পেট্রোলের আগুনে ঝলসানো রেখার মুখ দিয়ে অনবরত এমন গোঙানি আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ২৯নং ওয়ার্ড। 

হঠাৎ হঠাৎ একাই চুপ হয়ে যাচ্ছেন রেখা। কিন্তু নিরবতা ভেঙে আবারও কাঁপুনি দিয়ে উঠছেন, বলছেন 'ফেরদৌসির বিচার চাই'।

 

শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ২৯নং ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমনই বিভৎসতা।  

রেখা বেগমের পোড়া শরীর ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে ওষুধও দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার পোড়া মনটাকে কেউ সামলাতে পারছেনা। আগুনের পুড়ে যাওয়া ক্ষতে এখন তিলে তিলে মরছেন রেখা বেগম।  

২৬ নম্বর বেডে বসে বসে কাতরাচ্ছেন মৃত্যু যন্ত্রণায়। শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। পিঠের অংশটুকুও বাঁচেনি। তাই শুয়ে চোখের পলকও ফেলতে পারেননি রেখা। সারারাত অপলক জেগেই কাটিয়ে দিয়েছেন। পোড়া যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন গৃহবধূ রেখা বেগম।  

রেখা বেগমের ভাগ্নে রঞ্জু হোসেন বলেন, তার খালুর (কামরুল ইসলাম) পরকীয়া সম্পর্কের কারণে এক মাস ধরে তার খালা কলাবাগানে বাবার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। তার মেয়ে লাবন্য অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও ছেলে রাবিব ইসলাম এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছেলে-মেয়ে দুজনই মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতেই থাকেন। ছেলে-মেয়ের সঙ্গে তাদের বাবার কোনো যোগাযোগ নেই।

জানতে চাইলে রঞ্জু হোসেন বলেন, ঈদের দিন থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত। তার খালু কামরুল ইসলাম ওই দিন নগরীর দরগাপাড়া এলাকায় তার প্রেমিকা ফেরদৌসির বাড়িতে যান। কিন্তু এলাকার যুবকরা বিষয়টি বুঝতে পেরে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে পাড়ার বড় ভাইদের ডেকে ওই দুজনকে পেটান। কিন্তু ফেরদৌসি মনে করেন রেখা বেগমই লোক ভাড়া করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) রেখা বেগম দরগায় গেলে ফেরার পথে এরই জের ধরে তার শরীরে পেট্রোল ছুড়ে আগুন দেয় ফেরদৌসি। পরে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তার স্বামী কামরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।  

রেখা বেগমের বড় ভাই নওশাদ আলী জানান, কামরুল ইসলাম ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। তাদের বিয়ে হয় ১৯ বছর আগে। পদ্মা নদীর তীরে থাকা বিজিবি পরিচালিত 'সীমান্ত অবকাশ' ফার্স্টফুড রেস্তরাঁয় তার শেয়ার রয়েছে। গত সাত বছর থেকে তার বোন জামাইয়ের সঙ্গে ফেরদৌসির পরকীয়া সম্পর্ক। ফেরদৌসি তার বোন রেখা বেগমের বাল্যকালের বান্ধবী।  

তাই এতদিন বিষয়টি কেউ টের পাননি। এক বছর আগে স্বামীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পেরে রেখা তাদের পরকীয়া প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ফেরদৌসি তার বান্ধবী রেখার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে পাঠায়। কামরুল পলাতক রয়েছে। তিনি বাদী হয়ে এই ঘটনায় দুপুরের মধ্যেই মামলা করবেন।  

রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক আফরোজা নাজনিন জানান, রেখার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গৃহবধূ রেখা বেগমের (৪০) শরীরে পেট্রোল ছুড়ে আগুন দেয় বান্ধবী ফেরদৌসি খাতুন (৩৫)। ঘটনার পর রেখার কথা শুনে বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে ফেরদৌসিকে আটক করে পুলিশ। বর্তমানে তাকে বোয়ালিয়া থানায় রাখা হয়েছে।  

রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ বলেন, রামেক হাসপাতালে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ রেখার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। ফেরদৌসি তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়েছেন বলে রেখা বেগম জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফেরদৌসিকে আটক করেছে।

পুলিশের হাতে আটকের পর ফেরদৌসিকে থানায় রেখে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তিনি আগুন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হবে। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলের মধ্যে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।  

এছাড়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

**পরকীয়ায় বাধা, রাজশাহীতে গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৭
এসএস/বিএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।