ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহীতে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টায় শিক্ষক বরখাস্ত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৭
রাজশাহীতে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টায় শিক্ষক বরখাস্ত

রাজশাহী: রাজশাহীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কম্পিউটার প্রশিক্ষক অজিত কুমার সরকারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

অভিযোগের ঘটনায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩১ আগস্ট কলেজের গভর্নিং কমিটির ৩৪তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  

তবে ঈদের ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) ডাকযোগে এ সংক্রান্ত চিঠি অভিযুক্ত প্রশিক্ষকের নওগাঁর রাণীনগরের গ্রামের স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. তাইফুর রহমান।

 

চিঠিতে কেন তাকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ওই চিঠি তার হাতেও দেওয়া হবে বলে জানান অধ্যক্ষ।
 
এদিকে, ওই ছাত্রীর স্বামীর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী কলেজ পরিবর্তনের বিষয়ে পরামর্শের জন্য সম্প্রতি কলেজে দেখা করেন প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার প্রশিক্ষক অজিত কুমার সরকারের সঙ্গে। এরপর ওই ছাত্রী হিসাব বিভাগ থেকে জানতে পারেন প্রতিষ্ঠানে তার বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

কলেজ পরিবর্তন করতে গেলে তাকে বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে। বিষয়টি জানতে পেরে অজিত কুমার সরকার গত ২৯ জুলাই বিকেলে ওই ছাত্রীকে কয়েকবার ফোন করে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে বাসায় ডাকেন। সাহায্যের প্রত্যাশায় ওই ছাত্রী অজিত কুমার সরকারের নগরীর শালবাগানের বাসায় গেলে অজিত কুমার সরকার (৩৬) তাকে বলেন, ‘আমি তোমার সব সমস্যা জানি এবং এই বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সকল বিষয় দেখভাল করবো। কিন্তু আমার একটি প্রস্তাব আছে। ’

ওই ছাত্রী কী প্রস্তাব জানতে চাইলে অজিত কুমার সরকার তাকে অশ্লীল প্রস্তাব দেন এবং সে রাজি না হলে তার সঙ্গে জোর জবরদস্তি করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালান। এ সময় ওই নিগৃহীত ছাত্রী নিজেকে রক্ষা করে কাঁদতে কাঁদতে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। অজিত কুমার সরকার এখনও বিয়ে করেননি। শালবাগানের ভাড়া বাড়িতে তিনি একাই থাকেন।

এ ঘটনার পরদিন ৩০ জুলাই ওই ছাত্রীর স্বামী প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে দেখা করেন এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে চেয়ারম্যান বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর বিধায় দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেন।

এছাড়া চেয়ারম্যান বিষয়টি তদন্তের জন্য শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক ড. আনারুল হক প্রাং কে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট এজাজুল হক মানু, শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা শামীম আরা, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক মিনহাজ ফাতেমা ও সিনিয়র শিক্ষক খলিলুর রহমান।

তদন্ত কমিটি উভয়পক্ষের লিখিত বক্তব্য ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট প্রতিবেদন দাখিল ও আইনগত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ করেন।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত অজিত কুমার সরকারের বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরণের অভিযোগের কথা জানা গেছে। এ ধরণের এক ঘটনায় তাকে একবার নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার পুলিশ আটকও করেছিলো। সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ ধরণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং পরিবেশ কলুষিত হবে। এ কারণে অজিত কুমার সরকারকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক ড. আনারুল হক প্রাং বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন এবং কমিটির সুপারিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন অধ্যক্ষই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, সেপ্টম্বর ০৮, ২০১৭
এসএস/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।