দুর্গতিনাশিনী দেবীর আগমনীতে ভক্তকূলে মনে বইছে আনন্দের জোয়ার। রাজশাহীর আলুপট্টি শেখের চক এলাকার পাল বাড়িতে গেলেই তার আঁচ মিলছে।
তাই নিখুঁত শৈল্পিক ছোঁয়ায় এখন তিল তিল করে কাদা-মাটি দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দেবী দুর্গার প্রতিমা। বর্তমানে কাদামাটির কাজ চলছে। এগুলো শুকোলেই শুরু হবে রঙ আর সাজসজ্জার কাজ। ফলে দুর্গা প্রতিমায় ভরে উঠেছে মৃতশিল্পী কার্তিক চন্দ্র পালের বাড়ি।
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর দেবীর বোধন। তাই ব্যস্তার শেষ নেই। দ্রুত প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে করে রূপায়নের কাজ শুরু করতে হবে। রঙ আর তুলির আঁচরে ফুটিয়ে তোলা হবে দশভুজা দেবী দুর্গার প্রতিচ্ছবি।
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভুজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব।
তাই এখন ঘুম নেই পাল বাড়িতে। মনের আনন্দে কাজের ছন্দে পার্বণের জোর প্রস্তুতি চলছে। কার্তিক চন্দ্র পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গার প্রতিমা গড়ার কাজ প্রায় শেষের দিকে। মূলত প্রতিবছর রাজশাহী শহর এলাকায় বেশিরভাগ পূজা মণ্ডপেই সেজে ওঠে পাল বাড়িতে গড়ে ওঠা এই দুর্গা প্রতিমায়।
সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করেন এখানকার প্রতিমা শিল্পীরা। হাতের নিপুণ কারিগরিতে ১৫ থেকে ৩০টি প্রতিমা গড়ে তোলা হয়। রঙ-তুলির কাজ শেষে সাজসজ্জা। এরপরই চলে যায় বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে।
কার্তিক চন্দ্র পাল জানান, ২৫ বছর থেকে তিনি প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। তার কাছে বিভিন্ন ধরণের প্রতিমার ক্যাটালগ আছে। তা দেখেই প্রতিমা তৈরির অর্ডার দেন বিভিন্ন পূজামণ্ডপের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। ক্যাটালগনুযায়ী সর্বনিম্ন ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি করেন তিনি।
তাকে চারঘাটের সরদহ থেকে প্রতিমা তৈরির মাটি কিনতে হয়। তবে মাটির চেয়ে পরিবহনের খরচই বেশি। এক ট্রাক মাটির দাম পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। কিন্তু তা আনতে ভাড়াই লাগে আট থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা। প্রতিমা সাজানো চুল বর্তমানে পাঁচশ’ টাকা কেজি। এর সঙ্গে রঙ, শাড়িসহ অন্যান্য সাজসজ্জার উপকরণ রয়েছে। সব মিলিয়ে যা খরচ হয় তার চেয়ে বেশি লাভও থাকে। প্রতিমা নির্মাতা কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, আষাঢ়ের নয় তারিখ থেকে তারা প্রতিমা তৈরি শুরু করেছেন, কাজ প্রায় শেষ। এখন শুধু প্রতিমাগুলোর নকশা ঠিক করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দুর্গা প্রতিমাগুলোয় চূড়ান্ত রঙ লাগিয়ে পোশাক পরিচ্ছদে সুসজ্জিত করা হবে। তারপর উঠবে মণ্ডপে।
রাজশাহী হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অনিল কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে ২৬ সেপ্টেম্বর বোধনের মধ্যে দিয়ে শারদীয় শুরু হবে। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হবে ছয় দিনের দুর্গোৎসব। একটি বছরের জন্য ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে দেবালয়ে।
রাজশাহীতে এবার ৪শ’ ২২টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে মহানগরে রয়েছে ৬৭টি। আর রাজশাহীর নয় উপজেলায় রয়েছে ৩শ’ ৫৫টি। পূজা উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। ওই সভায় শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তাই আনন্দঘন পরিবেশেই এ বছর শারদীয় উৎসব উদযাপন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাজশাহী হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অনিল কুমার সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭
এসএস/এএটি/