ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চলে গেলেন অগ্নিদগ্ধ রেখা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
চলে গেলেন অগ্নিদগ্ধ রেখা গৃহবধূ রেখা বেগম (ফাইল ফটো)

রাজশাহী: স্বামীর পরকীয় প্রেমের জের ধরে বান্ধবী ফেরদৌসির দেওয়া আগুনে দগ্ধ গৃহবধূ রেখা বেগম চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। 

সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল পৌনে ৬টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ২৯নং ওয়ার্ডের ২৬নং বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

গৃহবধূ রেখা বেগমের মৃত্যুর পর তার বড় ভাই নওশাদ আলী বাংলানিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বর্তমানে তার মরদেহ হাসপাতালের শবাগারে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ দাফনের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।  

রেখা বেগমের বড় ভাই নওশাদ আলী জানান, রোববার (১০ সেপ্টম্বর) দুপুরের পর থেকে রেখার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তিনি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিলেন না। এরপরে চিকিৎসকরা তাকে অক্সিজেন দিয়ে রেখেছিলেন। সোমবার তার শারীরিক অবস্থার আরও বেশি অবনতি হয়। বিকেল সাড়ে পৌনে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।  

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের ইনচার্জ ডা. আফরোজা নাজনিন জানান, রেখা বেগমকে সুস্থ করার জন্য তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপ ছিলো। যে কারণে অবস্থা দ্রুত অবনতি হয়েছে।  

আফরোজা নাজনিন জানান, পেট্রোলের আগুনে গৃহবধূ রেখা বেগমের শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিলো। তবে শরীরের পেছন থেকে আগুন লাগায় ওই নারীর বুক ও মুখমণ্ডল রক্ষা পায় । সে কারণে তিনি চার দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) সেলিম বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, রেখাকে পুড়িয়ে মারায় তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। এরপর দাফনের জন্য মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক সেলিম বাদশা বলেন, এই ঘটনার মূল আসামি গ্রেফতারকৃত ফেরদৌসি খাতুনকে শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওইদিন তার বিরুদ্ধে আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিলো। আজ সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) তার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শিগগিরই তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া ঘটনার পর শনিবার (০৯ সেপ্টম্বর) দুপুরে নগরীর বোয়ালিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার ওই গৃহবধূর স্বামী কামরুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন। প্রয়োজনে তাকেও রিমান্ডে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।  

এর আগে বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহীর দরগাপাড়া এলাকায় রেখার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান এক নারী। এরপর রেখাকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেখা এই ঘটনার জন্য বাল্যকালের বান্ধবী ফেরদৌসি খাতুনকে (৩৫) দায়ী করে তার নাম বলেন।  

 ‘‘সেলিম বাদশা আরও জানান, তার আগের মামলাটি বর্তমানে হত্যা মামলায় রূপ নিবে। ’’

তার কথার ভিত্তিতে ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ ফেরদৌসি খাতুনকে আটক করে। তিনি কশাইপাড়া এলাকার আলম হোসেনের মেয়ে। পরদিন সকালে রেখা বেগমের জবানবন্দি রেকর্ড করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ।

কারাগারে আটক থাকা ফেরদৌসি খাতুন রেখা বাল্যকালের বান্ধবী। এরই সুবাদে তার স্বামী কামরুল ইসলামের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন ফেরদৌসি।

**মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর রেখা বললেন 'ফেরদৌসির বিচার চাই'
**স্বামী ও তার প্রেমিকার বিরুদ্ধে মামলা, রিমান্ডের আবেদন
**অগ্নিদগ্ধ রেখার অবস্থা অপরিবর্তিত, স্বামী গ্রেফতার
**পরকীয়ায় বাধা, রাজশাহীতে গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
এসএস/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।