নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় মনে করছে, এর মাধ্যমে ফেরিতে সহজেই রেলের যাত্রী পারাপারের পাশাপাশি ওয়াগন পরিবহনও করা যাবে। ফলে রংপুর বিভাগের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।
তবে যমুনার ভাঙনের কথা বিবেচনা করে দুই ঘাটের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার।
নদীভাঙন, নাব্যতা হ্রাস ও বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের কারণে উত্তরবঙ্গ-ঢাকা-উত্তরবঙ্গের সরাসরি রেল যোগাযোগের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৫ বছর আগে। বন্ধ হয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী বাহাদুরাবাদ-বালাসী নৌ-রুটের রেল ও যাত্রীসহ সকল ধরনের ফেরি সার্ভিস। ফলে তখন থেকেই উত্তরবঙ্গের ১৩ জেলা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের পাঁচ জেলার সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
তবে ঘাট দু’টি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ইঞ্জিন চালিত নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন এখনো।
ঘাট বন্ধের পর থেকেই যমুনা নদীতে রেলসেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন ওই অঞ্চলের মানুষ। এর প্রেক্ষিতে ফের চালু হতে যাচ্ছে ঘাট দু’টি ও রেলঘাট- যেগুলোতে আবারও রেল-ফেরিযাত্রীর মিলনমেলা ঘটবে।
এ লক্ষ্যে চলতি সময় থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেতে যাচ্ছে প্রকল্পটি।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন প্রধান (পরিকল্পনা উইং) এনায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রায় ২০০ বছর আগের বালাসী-বাহাদুরাবাদ ঘাটে ফেরির পাশাপাশি ব্রিটিশ রেলওয়ের রেলঘাটও ছিলো। নতুনভাবে ঘাট দু’টি চালুর পাশাপাশি রেলঘাটও করে দেবো। সহজেই ওয়াগন পরিবহনে প্রয়োজনে নদীখনন আরও বাড়াবো’।
তিনি জানান, ‘দেড় দশক আগেও উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁওসহ ১৩ জেলা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ সদরসহ পাঁচ জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি রেল যোগাযোগ ছিলো। এটিকে পুনরুদ্ধার করবো। যাত্রীবাহী ও ওয়াগনবাহী রেলফেরি সার্ভিস চালু হলে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ (রেলযাত্রী) ও লাখ লাখ মেট্রিক টন মালামাল পারাপার করা যাবে। অল্প খরচে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল, সার, কৃষিজাতপণ্য, রড-সিমেন্ট, পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রী ও অন্যান্য মালামাল অতি সহজে আনা-নেওয়া সম্ভব হবে’।
প্রকল্পের আওতায় ফেরি-রেলঘাট চালু করতে দুই পাড়ে ১৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ভূমি উন্নয়ন, কমপেকশন , ড্রেসিং ও লেভেলিং কাজ করা হবে দুই লাখ মিটার। ৩০ লাখ মিটার গভীর নদীড্রেজিং, ৩৩ হাজার বর্গমিটার পারকিং ইয়ার্ড ও এক হাজার বর্গমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থাও থাকবে। দু’ই ঘাটে অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ফেরিঘাটের অ্যাপ্রোচ রোড থাকবে সাড়ে ৬ হাজার বর্গমিটার।
ফেরিঘাটে ৩ হাজার ২০০ বর্গমিটার প্রটেকশন ও ৫ হাজার বর্গমিটার সীমানা প্রাচীর দেওয়া হবে। ২৪০ বর্গমিটার স্টিল জেটি ও ৭৬০ মিটার স্টিল স্পাড থাকবে। পার্কিং ইয়ার্ড এলাকার নিরাপত্তায় জন্য দেড় হাজার মিটার ডিভাইডারের সঙ্গে থাকছে উন্নত টার্মিনাল ও বৈদ্যুতিক কাজ।
দুই ঘাটে থাকবে আধুনিক কার্যালয়, ওয়েটিং শেড, স্টোররুম, পাম্প হাউজ, পাইলট হাউজ, পুলিশ ব্যারাক, টোল বুথ ও টয়লেট কমপ্লেক্স।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর