রাজশাহীর একটি হোটেলকক্ষে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে। ওই ছাত্রীকে খুনের আগে তার বন্ধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকেও খুন করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে।
থানা পুলিশ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল, মেয়েটিকে খুন করে ছেলেটি আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু মরদেহ উদ্ধারের সময় মিজানুরের দুই হাত পেছন দিকে বাঁধা ছিল। হাত বাঁধা অবস্থায় কোনো লোক তো ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে পারবে না। তদন্তে ত্রুটির কথা উল্লেখ করে আদালত পিবিআইয়ের কাছে মামলাটি পাঠায়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই নৃশংস খুনের নেপথ্য কাহিনী।
পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, সনি টিভির ক্রাইম পেট্রোল অনুষ্ঠান দেখে তারা খুনের পর স্বাভাবিক থাকার কৌশল রপ্ত করেছিল। এতে তারা প্রথম দিকে সফলও হয়েছিল। খুনের পর দেড় বছর ধরে এলাকাতেই অবস্থান করে বিভিন্ন কৌশলে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে সক্ষম হয়। কিন্তু আমরা তদন্তভার নেওয়ার পর আসল রহস্য উদঘাটন করি এবং চারজনকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।
গত বছরের ২২ এপ্রিল রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার নাইস ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মিজানুর রহমান (২৩) এবং সুমাইয়া নাসরিনের (২৩) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মিজান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। সুমাইয়া ছিলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই রাজশাহী জেলার উপ-পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সুমাইয়ার সঙ্গে রাহাতের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক ভেঙে যাবার পর মিজানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। মিজান এবং রাহাত পরস্পরের বন্ধু ছিলেন। সম্পর্ক ভাঙার প্রতিশোধ নিতেই সুমাইয়া ও মিজানকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
মহিদুল জানান, মিজানুর সুমাইয়াকে নিয়ে হোটেলে ওঠার খবরটি আগেই জেনে গিয়েছিল রাহাত। রাহাতসহ চারজন মিলে একজন হোটেল বয়কে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে। তার সহায়তায় পাশের বিল্ডিংয়ের কার্নিশ বেয়ে রাহাতসহ চারজন হোটেলে প্রবেশ করে। কক্ষে তখন সুমাইয়া একা ছিলেন।
রাহাত ফোন করে মিজানকে ডেকে আনে। দরজা বন্ধ করে প্রথমে মিজানকে মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর সুমাইয়াকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আবারও পাশের ভবনের কার্নিশ বেয়ে পালিয়ে যায় চার যুবক।
মহিদুল আরও জানান, দীর্ঘ তদন্তের পর গত ২০ অক্টোবর রনিকে ঢাকা থেকে আটক করে পিবিআই টিম। কারণ মিজানুর সুমাইয়াকে নিয়ে কোন হোটেলে উঠবে সেই বিষয়ে পরামর্শ করেছিলেন পূর্বপরিচিত রনির সঙ্গে। মোবাইল কললিস্টের সূত্র ধরে রনিকে আটক করা হয়। রনি বাকি তিনজনের কথা জানায় এবং ঘটনার বিষয় খুলে বলে। এরপর রাহাত, উৎস এবং আল আমিনকে রাজশাহী মহানগর থেকে গত ২৩ অক্টোবর আটক করা হয়।
ন্যূনতম সূত্রবিহীন হত্যাকাণ্ডে চারজনকে আটকের পর রনি ও উৎস ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এ ঘটনাটি রাজশাহী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৭
আরডিজি/টিসি/জেএম