ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঠাকুরগাঁও টাঙ্গন বাঁধে বসেছে মাছ শিকারীদের মিলনমেলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৭
ঠাকুরগাঁও টাঙ্গন বাঁধে বসেছে মাছ শিকারীদের মিলনমেলা ঠাকুরগাঁও টাঙ্গন বাঁধে বসেছে মাছ শিকারীদের মিলনমেলা

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন টাঙ্গন ব্যারেজে বসেছে মাছ শিকারীদের মিলনমেলা। সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে এ মাছ শিকার শুরু হয়।

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের চাপাতি গ্রামে অবস্থিত টাঙ্গন ব্যারেজ বাঁধ। বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মাছ শিকারী এখানে মাছ ধরতে আসেন।

কেউ মাছ ধরে বিক্রি করছেন, আবার কেউ কেউ শখের বশে জাল দিয়ে মাছ ধরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ মাছ শিকার দেখতে গিয়ে সেখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

পঞ্চগড়ের মির্জাপুর থেকে আসা মোখলেসুর রহমান বলেন, আমি শখের বসে মাছ মারতে এসেছি। কিন্তু অনেকক্ষণ জাল পেতে রাখার পর অল্প কিছু মাছ পেয়েছি। তবে বাড়ি ফেরার সময় এখান থেকে আরো মাছ কিনে নিয়ে যাব।

ঠাকুরগাঁও থেকে মাছ ধরতে আসা আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা প্রতি বছরই এখানে মাছ ধরতে আসি। প্রতিবছরই অনেক মাছ পাই কিন্তু এবার একটু ভিন্ন। কারণ ব্রিজের সামনের জমিতে পানি জমে থাকে আর সেই জমির মালিক ঝড় ফেলে রেখে মাছগুলো আটকে রাখে।

ঠাকুরগাঁও টাঙ্গন বাঁধে বসেছে মাছ শিকারীদের মিলনমেলাদেবীগঞ্জ থেকে আসা জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিবছর এখানে মাছ ধরতে আসি, এ উৎসব থাকে প্রায় এক সপ্তাহ। এখানে যে যার মত মাছ শিকার করে নিজেদের বাড়ি নিয়ে যায়, আবার কেউ বিক্রি করে।

রোববার রাত ১০টায় প্রতি বছরের মতো টাঙ্গন ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়া হয়। মাছ শিকার করার জন্য সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এ ব্যারেজ। যখন পানি কমতে থাকে তখন শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব। এখানে বিভিন্ন জেলার মাছ শিকারীরা তাবু টাঙিয়ে দিনরাত মাছ শিকার করেন।

মাছ শিকারীরা ফিকা জাল, লাফি জাল, কারেন্ট জাল, চটকা জাল, সহ বিভিন্ন মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে আসে মাছ শিকার করার জন্য।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হচ্ছে এ ব্যারেজে। এ সমাগম চলবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত। জানালেন বাঁধের পাহারায় নিয়োজিত আনসার সদস্য।

এদিকে শহরের চাইতে এখানকার মাছের দাম বেশি বলে জানালেন ক্রেতারা।
রুহিয়া থেকে মাছ কিনতে আসা মানিক বলেন, এখানে টেংরা, গোচি, শিং, ট‍ুনা মাছ প্রতি কেজি ৩০০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর শোল ও রুই কাতল মাছ চাওয়া হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪শ’ টাকা। প্রতি কেজি পুঁটি মাছ ১৫০-২০০ টাকা।

ঠাকুরগাঁও টাঙ্গন বাঁধে বসেছে মাছ শিকারীদের মিলনমেলাঠাকুরগাঁও শহরের ব্যবসায়ী জালাল জানান, এখানে শহরের চাইতে মাছের দাম বেশি। শহরে যে মাছ ৩শ টাকায় পাওয়া যায়, সেই মাছ এখানে বিক্রি হচ্ছে ৪-থেকে ৫শ’ টাকা কেজি দরে।

রাজাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর এখানে মাছ ধরার উৎসব বা মেলা বসে। দেখে মনে হয় যেন বিভিন্ন জেলার মানুষের মিলনমেলা। এখানে মাছ শিকার সবার জন্য উন্মুক্ত। কারো জন্য বাধা নেই যে যার মতো যত খুশি তত মাছ ধরতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলার ৪৪ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে শুষ্ক মৌসুমে গম, বোরো, সরিষা ও আলু সম্পুরক সেচ দেয়ার উদ্দেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে পাউবো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চাপাতি গ্রামে টাঙ্গন নদীর ওপর এই বাঁধ দেয়া হয়।
 
ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। ১৯৮৪-৮৫ অর্থ বছরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়ে ১৯৯২- ৯৩ অর্থ বছরে নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, ৩০ অক্টোবর, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।