ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের কষ্টের গল্প

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৭
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের কষ্টের গল্প যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: দিনাজপুরে শীত জেঁকে বসায় দরিদ্ররা পড়েছে চরম বিপাকে। তীব্র শীতের মধ্যে ফুটপাত ও স্টেশন এলাকার ছিন্নমূল মানুষ শীত বস্ত্র ছাড়া অতিকষ্টে রাত কাটাচ্ছে। খাবার যোগাড়ে সারা দিন ব্যয় হয়ে যায় বলে রাতে ফুটপাত ও স্টেশনের বাঁধানো চত্বরে কোনোরকমে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এসব ক্লান্ত মানুষ।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাতে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে দেখা যায়, প্লাটফর্মে ‍আরো অনেক ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে ইট-সিমেন্টের বসার আসনে ঘুমাচ্ছেন এক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। বুকে তার মুক্তিযোদ্ধার ব্যাচ।

ছবি তোলার শব্দে তড়িঘড়ি উঠে বসেন আবুল কাশেম।

কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করতে গিয়ে বিশাইখালি এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর ছোঁড়া বোমায় আহত হন তিনি। কানে আঘাত পেয়ে হারিয়ে ফেলেন শ্রবণ শক্তি।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭৪ সালের ১৭ এপ্রিল  তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বাহিনীতে যোগদান করতে যান আবুল কাশেম। কিন্তু শ্রবণ শক্তি না থাকায় মেডিকেল বোর্ড তাকে বাতিল করে দেয়।

প্রত্যাখ্যাত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে গিয়ে সাহায়তা চান আবুল কাশেম। মেজর জেনারেল খলিলের কাছে তখনই ফোন করেন বঙ্গবন্ধু। শেষ তক বিডিআর এ চাকরি হয় আবুল কাশেমের।

স্টেশনে ঘুমিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম।  ছবি: বাংলানিউজ বিডিআর বাহিনীতে ১৫ বছর ৫ মাস চাকরি করার পর মেডিকেল ফিটনেস না থাকায় যেতে হয় অবসরে। আর অবসরে গিয়েই প্যারালাইসড হয়ে পড়েন আবুল কাশেম। দীর্ঘদিন বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসায় অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় চাকরি থেকে পাওয়া টাকা সব ফুরিয়ে যায়।

বাংলানিউজকে আবুল কাশেম জানান, মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ও চাকরির পেনশনের টাকা দিয়ে চিকিৎসা ও সংসার চলে। কিন্তু ওই টাকায় চিকিৎসা ও সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।  

চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার হাসাতহ এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম। তার চার কন্যা সন্তানের সবাই এখন বিবাহিত। স্ত্রী পারভিন বেগমকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন আবুল কাশেম।  

আবুল কাশেম আরো জানান, মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেলেও গত ৪৬ বছর ধরে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা থেকে বঞ্চিত তিনি। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেতে একাধিক বার আবেদন করলেও কোনো লাভ হয়নি।

সংসারে অভাব থাকায় আর্থিক সহায়তা নিতে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকালে চুয়াডাঙ্গা থেকে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় সাবেক বিডিআর সদস্য রফিকুল ইসলামের বাড়িতে রওনা দেন ট্রেনে করে। রাতের ট্রেনে আসায় ভুলবশত ফুলবাড়ীতে না নেমে দিনাজপুরে চলে আসেন। এজন্য দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফর্মে রাত যাপন করতে হয়। সকালে ফুলবাড়ীতে বন্ধুর বাড়িতে যাবেন। সারাদিন কিছু খাননি। পেটে ক্ষুধা নিয়েই ঘুমিয়েছিলেন। বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে পেট ভরে খাবেন জানিয়ে তৃপ্তির হাসি দিলেন আবুল কাশেম। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পেতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।