বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে দু’দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায়। চরকায় সুতা কাটা উদ্বোধন করেন রানী ইয়েন ইয়েন।
এসময় রাঙামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুষ্মিতা চাকমা, বিহারের ধর্মীয় গুরুসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিহার এলাকা জুড়ে মেলার পসরা বসেছে। মেলায় হরেক রকম গৃহ সামগ্রী থেকে শুরু করে বাচ্চাদের খেলনাসহ খাবারের দোকান সবই রয়েছে।
উদ্বোধনের পর চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায় বলেন, কঠিন চীবর দান শুধু বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ধর্ম হলেও পাহাড়ে বসবাসরত সবার কাছে চীবর দান এখন সার্বজনীন। পাহাড়ে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর বসবাস। আর চীবর দানের মধ্য দিয়ে সব জাতিসত্তার মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হোক এটাই প্রত্যাশা। রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান বাংলানিউজকে জানান, সুতা কাটার পর শুরু হবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর প্রস্তুতের আনুষ্ঠানিকতা। প্রায় দুইশ’ বেইনে ৬ শতাধিক দায়ক-দায়িকা অংশ নেয় চীবর প্রস্তুতের কাজে। সুতা সিদ্ধ ও রং করা, সুতা টিয়ানো, সুতা শুকানো, সুতা তুম ও নলীতে ভরা এবং বেইন বুননের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার সারা রাত অতিক্রম করবে দায়ক-দায়িকারা।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলবে চীবর প্রস্তুত। আর এভাবেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্তুত করা হয় এ পূর্ণময় চীবর, যা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বৌদ্ধ ধর্মীয় শাস্ত্র মতে গৌতম বুদ্ধের অনুসারী মহা উপাসিক বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত রীতি অনুসারে এ চীবর প্রস্তত কষ্টদায়ক এবং কঠিন হলেও চীবর প্রস্তুত করে তা ভিক্ষু সংঘের হাতে তুলে দেয়া সব দানের মধ্যে উত্তম দান এবং অধিক পূর্ণময় বিধায় এ দানকে দানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দান হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, রাজবন বিহারের দান উত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
১৯৭৭ সাল থেকে রাঙামাটি রাজবন বিহারে সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভন্তে বিশাখা প্রবর্তিত রীতি অনুসারে এ চীবর দান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এর পর থেকেই প্রতিবছর রাজবন বিহারে বৃহৎ পরিসরে এ চীবর দান অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৭
আরবি/