ভুক্তভোগীরা বলছেন, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের কাছে এমন আচরণে তারা উদ্বিগ্ন। আর বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলছেন, সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ ছাড়াই মাসে একাধিকবার যাত্রীদের ভারত ইমিগ্রেশন থেকে ফেরতের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকাল থেকে শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত এপথে ভারতে প্রবেশকারী অতন্ত ১৫ জন বাংলাদেশি যাত্রীকে কোনো অভিযোগ ছাড়া তাদের পাসপোর্টে এন্ট্রি রিফিউজ সিল মেরে ফেরত পাঠিয়েছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ।
এদিকে মাল্টিপল ও টুরিস্ট ভিসার পাশাপাশি মেডিকেল ভিসার উপরও তাদের শর্তারোপে দিন দিন যাত্রীরা পড়ছেন বিপাকে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও সংশিষ্ট কর্মকর্তারা সহজীকরণের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ব্যবসায়িক কাজে ভারতে যাওয়ার জন্য ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে যান বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী হযরত। এসময় পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের আইভি পুলিশ তাকে ফেরত পাঠিয়ে জানিয়ে দেন, ১৫ দিন পরে আসেন। মাসে সর্বোচ্চ দুইবার প্রবেশ করা যাবে।
একই কথা জানান ভারতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে বেনাপোল চেকপোস্টে আসা বাংলাদেশি যাত্রী আরিফুল ইসলাম।
এদিকে ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশিদের মেডিকেল ভিসায় এক বছরের মেয়াদ দিলেও ওই সময়ের মধ্যে ভারতে একবার থেকে সর্বোচ্চ তিনবারের বেশি প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। এতে দেখা যাচ্ছে, যারা চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন, তাদের প্রথমে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে ডাক্তার বলছেন, ১৫ দিন আবার যেতে। এই দীর্ঘ সময় মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের পক্ষে ভারতে অবস্থান করা অনেক ব্যয়বহুল। তাই অনেকে বাড়িতে ফিরে ১৫ দিন পরে আবার যেতে চায়। কিন্তু ১৫ দিন পরে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ডাক্তার তাকে পরবর্তী চিকিৎসা শেষে ৩ মাসের ওষুধ দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার পর আবার সমস্যা দেখে দিলে ভিসার মেয়াদ থাকলেও তখন আর তার যাওয়ার সুযোগ থাকে না।
মেডিকেল ভিসায় চিকিৎসার জন্য ওই রোগীর সঙ্গে একজনকে (মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট) ভিসা দিচ্ছে ভারতীয় হাইকমিশন। কিন্তু এখানেও শর্ত। কেউ কাউকে ছাড়া আসা-যাওয়ার কোনো অনুমতি নেই। এতে বর্তমানে ভিসা সহজীকরণ হলেও অনেক ক্ষেত্রে তার জটিলতা বেড়েছে আগের চেয়ে তিনগুণ।
বেনাপোল চেকপোস্টের মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ী মশিয়ার রহমান বলেন, মাল্টিপল টুরিস্ট ভিসার অর্থ ভিসার মেয়াদ থাকা পর্যন্ত প্রয়োজনে একাধিকবার যাত্রার সুযোগ। কিন্তু সেখানে যদি ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সময় বেধে দেন তাহলে এ ভিসার কোনো অর্থ হয় না। যেখানে দুই দেশের সরকার মানুষের প্রয়োজন ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করতে ভিসা ব্যবস্থা সহজীকরণ করছেন সেখানে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে ব্যবসা, ভ্রমণ ও চিকিৎসার প্রয়োজনে এপথে মানুষের যাতায়াত গত ৫ বছরে বেড়েছে ৩ গুণ। ভারতে ব্যবসায়িক কাজে মাসে একাধিকবার যাতায়াতের প্রয়োজন হয়। টুরিস্ট বা বিজনেস ভিসায় এসবের কিছু ভারতীয় হাইকমিশন তাদের দেওয়া ভিসাতে উল্লেখ না করলেও পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এমন আচরণ করছেন। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা প্রয়োজন।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ ইদানীং সব পাসপোর্টধারী যাত্রীদের গ্রহণ করছে না। বিশেষ করে এক মাসে একাধিকবার যাতায়াতকারী যাত্রী। কিন্তু এ বিষয়ে লিখিত বা মৌখিক কোনো কারণ তারা আমাদের জানায়নি। তবে এ ধরনের ভারতীয় কিংবা বাংলাদেশি যাত্রীর ক্ষেত্রে একাধিকবার যাত্রায় বেনাপোল ইমিগ্রেশনে এমন কোনো বাধা নেই। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, ০৫ নভেম্বর, ২০১৭
আরআর