রোববার (৫ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্কুলটির পক্ষে বাদী হয়ে মামলাটি (সিআর ১২৩/২০১৭) করেন পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি হাজি শাহাদাত চৌধুরী।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- স্কুলের জমি দখলে নেওয়া আনিছুর রহমান মৃধা, দাদন আকন, আলিম, আতাউর রহমান, কামাল হোসেন, নাজমুল আলম ও ইউসুফ মিয়া।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৯৯ সালের ২৯ আগস্ট ফতুল্লার ভূইগড় গিরিধারা আবাসিক এলাকায় রমজান আলী চিশতী উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে সাড়ে ৭ শতাংশ জমি দান করে দলিল (নং ৪২৪০) সম্পাদন করেন ওই এলাকার বাসিন্দা সেলিম চৌধুরী।
এরপর জনগণের আর্থিক সহযোগিতায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম চৌধুরী ১৪ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে সর্বমোট চার লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
পরে স্কুলের জমিটিও একই এলাকার আনিছুর রহমান মৃধা, দাদন আকন, আব্দুল আলিম ও আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একটি চক্র দখল করে নেন। তারা স্কুলটির অবকাঠামো দখল করে নিয়ে টেবিল-বেঞ্চসহ সব আসবাবপত্র লুটে নেন এবং স্কুলটির সাইনবোর্ড মুছে ফেলেন। এরপর সেখানে ক্রয়সূত্রে মালিক উল্লেখ করে তাদের নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন। ভবন বেদখল হয়ে পড়ায় শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে স্কুলটির ১২০ জন শিক্ষার্থীর।
বাদীপক্ষের অভিযোগ, স্কুল ভবনটি বর্তমানে সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানাভাবে ভয়-ভীতি, অপহরণ ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার (এসপি), সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সংবাদ প্রকাশের পরে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হুমকি দিচ্ছেন আসামিরা। স্কুলটি রক্ষার আন্দোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধেও চলছে নানা চক্রান্ত।
এমনকি আন্দোলন ঠেকাতে স্কুল দখলের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগকারীকেই উল্টো দখলদার বানানোর চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
মামলার বাদী হাজী শাহাদাৎ চৌধুরীকে সন্ত্রাসী, জবরদখলকারী ও ভাড়াটিয়া উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া ছাড়াও তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলাও দায়ের করা হয়েছে। স্কুলটি দখলকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও তাদেরকে পুলিশ আটক করছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্কুলের জমি দখলে নেওয়া আনিছুর রহমান মৃধা দাবি করে বলেন, ‘স্কুল কমিটির সভাপতি সেলিম চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি রোগে আক্রান্ত। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রেজ্যুলেশন এনেছেন, তিনি স্কুলটি আর পরিচালনা করবেন না। স্কুলটিতে কোনো শিক্ষার্থীও ছিলো না’।
‘যে কারণে তিনি স্কুলের জমিটি আমাদের কাছে বিক্রি করেছেন। আর কোনো শিক্ষক যদি তার কাছে অর্থ পেয়ে থাকেন, তাহলে তারা তার বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন’।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘গিরিধারা রমজান আলী চিশতি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। কেউ যদি স্কুলের নামে সম্পত্তি দান করেন, তাহলে সেটি জনগণের সম্পত্তি হয়ে যায়। সে জায়গা পুনরায় বিক্রির এখতিয়ার তার নেই’।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৭
এএটি/এএসআর