ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘বুড়া হইলে বাপ-মা বেশি ভার হইয়া যায়’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৭
‘বুড়া হইলে বাপ-মা বেশি ভার হইয়া যায়’ আছিয়া বেগম তার দোকানে পিঠা তৈরি করছেন। পাশেই তার স্বামী, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘পোলাগোই চলেনা আবার আমোগো খাওয়াইবো! বুড়া হইলে আবার তাগো কোনো দাম থাকে নাকি? বাপ-মা বেশি ভার হইয়া যায়'। কথাগুলো বেশ খানিকটা আক্ষেপের সঙ্গেই বলছিলেন আছিয়া বেগম।

বয়সের কথা জানতে চাইলে একগাল হেসে ওঠেন তিনি। বলেন আমার বয়েস, সে আবার জানি নাহি! তবে স্বামী জসীম উদ্দীন (৭০) তার বৃদ্ধ বয়সের হাতিয়ার হিসেবে পাশেই রয়েছেন আছিয়া বেগমের।

সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে উপজেলা পশু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাউন্ডারি ঘেঁষে তার ছোট্ট একটি পিঠার দোকান। আর এই দোকানেরই চলে বুড়ো-বুড়ির সংসার।

সকলের তো আর বাসাবাড়িতে পিঠা বানানোর সুযোগ হয় না কিংবা অনেকে বানাতেই পারেন না। আর শীতকালে পিঠা খাওয়া চলবে না তা কি করে হয়? মহাসড়কের পাশে দিয়ে যাতায়াতরত পথচারী, বাসের হেলপার-কন্টাক্টর, রিকশাচালক, পোশাক শ্রমিক, চাকরিজীবী সব শ্রেনি পেশার মানুষই এখানে ছুটে আসেন পিঠা খেতে। আছিয়া বেগমের তৈরি পিঠা, ছবি: বাংলানিউজকুপির আলোতে ছোট্ট একটি মাটির চুলায় তৈরি করেন ভাপা পিঠা।

পিঠা বানাতে বানাতে আছিয়া বেগম বাংলানিউজকে জানালেন, মুক্তিযুদ্ধের পরপরই জামালপুর থেকে সাভারে আসেন তারা। সংসার জীবনে তিন ছেলে ও চার মেয়ে থাকলেও তাদের দেখার তেমন কেউ নেই। সারা বছরই চলে তার পিঠার এই ছোট্ট দোকানটি।

সন্তানদের কথা বলতে গিয়ে আছিয়া বেগম বলেন, 'কেউ রিকশা চালায় আবার কেউ করে দিনমজুর। আমাগো কেমনে দেখবো হেরা। নিজেগো তো শখ-আল্লাদ আছে, নাতিপুতি আছে। মাসে প্রায় ৫/৬ শত টাকার ওষুধ লাগে সেগুলোই বা কে দেবে? তাই তো নিজেই পিঠা বিক্রি করে যা আয় করেন তাই দিয়ে সাভারের চাপাইন এলাকায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী থাকেন। কোনো মতো খেয়ে পরে চলে যায় তাদের জীবন।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে চাল, গুড়, নারিকেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আবার ঝড়বৃষ্টিতেই যতো সমস্যা। নেই দোকানের উপরে কোনো চালা। তার উপরে প্রায় প্রতিদিনই চলে উচ্ছেদ অভিযান। এ যেন মরার উপর খারার ঘা এর মতো অবস্থা।

তবুও থেমে থাকেনা আছিয়ার জীবন যুদ্ধ। শত কষ্টের মাঝেও খানিকটা আনন্দের সঙ্গে বলেন, অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়ে ধারদেনা করে একটি মেয়েকে বিদেশে (জর্ডান) পাঠিয়েছেন। তার একটি পাঁচ বছরের মেয়ে (নাতনি) আছে। তার দেখাশোনাও আছিয়াই করেন। মেয়ের পাঠানো সামান্য টাকা এবং পিঠা বেঁচে যা আয় হয় তাই দিয়েই দিন চলে যায় তার। কারো কাছে হাত পেতে বা সাহায্য সহায়তা নিয়ে নয় নিজের পরিশ্রমে কর্মঠ হাতে নিজেই টেনে চলেছেন সংসারের হাল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৭
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।