ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুরে দাঁড়ানো হয়ে ওঠেনা ওদের!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৭
ঘুরে দাঁড়ানো হয়ে ওঠেনা ওদের! ঘুরে দাঁড়ানো হয়ে ওঠেনা ওদের!

ফেনী: ঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই তাদেরে নিত্য বসবাস। শত কষ্টে সাজানো সংসার নিমিষেই ভেসে যায় দরিয়ার জলে। আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা, কিন্তু শেষ অবদি তা আর হয়ে ওঠেনা, এই করেই এক জীবন কেটে যায় তাদের। বলছি সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার প্রান্তিক জনপদের বঞ্চতি মানুষগুলোর কথা। 

বৃহস্পতিবার (০৯ নভম্বের) ফেনীর সোনাগাজী সদর উপজেলার জেলে এলাকায় গিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় এমন ক’জন ভাগ্য বিতাড়িত উপকূলের বাসিন্দাদের সঙ্গে।  

ভারতী জলদাস নামের একজন বলেন, বেশ সাজানো গোছানো দো’ছালা ঘর ছিল তার, ঘরে ছিল বিভিন্ন আসবাবপত্র।

গত ২১ অক্টোবর আকস্মিক ঝড়ে তার ঘর ভাসিয়ে নিয়ে যায় জোয়ারের পানি। সে থেকে কোনো রকমে ছাওনি দিয়ে খোলা আকাশের নিচেই বসবাস। সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা না পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে তিনি ক্লান্ত।  
ঘুরে দাঁড়ানো হয়ে ওঠেনা ওদের!প্রায় শতবর্ষী নারী সরবালা বাংলানিউজকে জানান, জন্ম থেকেই দরিয়ার সঙ্গে বসবাস তার। দীর্ঘদিন কষ্টেসৃষ্টে বেঁচে থাকার জন্য সংসার সাজানোর পর হঠাৎই ধরিয়া তা ভাসিয়ে নিয়ে যায়, আবার চলে কোনো রকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা। সরবালা জানান, তাদের জীবন যেন ভাঙা গড়ার খেলা।  
 
কথা হয় চরচান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা খাদিজা খাতুনের সঙ্গে, তিনি জানান গত মাসের ২১ তারিখে আকস্মিক জলোচ্ছ্বাসে তার পুরো সংসার ভেসে যায় জোয়োরের পানিতে। সারা জীবনের সঞ্চয়ে কেনা খাট পালঙ্ক এবং এবং আলমীরাও ওক্ষা করা যায়নি। লাখ টাকার সংসার জোয়ারে ভেসে গিয়ে এখন পথের ফকির।  

খাদিজা বাংলানিউজকে বলেন, আজ এক মাস হলো মানবেতর জীবন যাপন করছি সরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি। সব হারিয়ে পথে বসলেও সহযোগিতা করার কেউ নেই।  
ঘুরে দাঁড়ানো হয়ে ওঠেনা ওদের!দুর্যোগ প্রবণ এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, গত ২১ অক্টোবরের জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। সরকারি-বেসরকারি কোনো ধরনের সহায়তা না পাওয়ায় কোনো ধরনের প্লাষ্টিকের ছাওনি দিয়ে খোলা আকাশের নিচেই বসবাস করতে হচ্ছে অনেককে। এসব এলাকার মানুষ জানায়, ঝড়ে শুধু বসত বাড়ি যায়নি মাঠের ফসলও ভেসে গেছে।  

নিদারুন কষ্টে কাটছে তাদের জীবন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শফিউল্লাহ জানান, গত মাসের জোয়ারের পানিতে এখানকার বাসিন্দাদের ঘরের সবকিছু ভেসে গেছে। ভিটে-মাটি ছাড়া এখন আর কিছুই নেই বাড়ি নির্মাণের জন্য অনেক টাকার দরকার, কোনো সাহায্য সহযোগিতা না পাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই আছেন অনেকে।
ঘুরে দাঁড়ানো হয়ে ওঠেনা ওদের
জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্নবাসনের ব্যাপারে সোনাগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আরেফিন বলেন, ফেনী নদী উপকূলবর্তী মানুষগুলো প্রতি বছরই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরো উপকূল জুড়ে যদি আউটার বেড়িবাঁধ করা সম্ভব না হয় তাহলে মানুষগুলোর দুর্ভোগ কাটবেনা। তারপরও প্রতিবারই তাদের পাশে থাকে ইউনিয়ন পরিষদ। সংকটকালীন সময়ে শুকনো খাবার এবং এর পরে পুনর্বাসনের জন্যে উপজেলা প্রশাসনের কাছে তালিকা দেয় ইউনিয়ন পরিষদ।  

কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণ বিতরণ করে উপজেলা প্রশাসন। এর পরে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বরাদ্ধ আসলে তারপর তা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়। গেল মাসের জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকাও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৭
এসএইচডি/বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।