কিন্তু কুয়াতে ফুতসু কৌশলে ডলার না দিয়েই ইউরো নিয়ে চলে যান এবং ব্যাংক কর্মকর্তা জিয়ার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর উত্তরা থেকে বৃহস্পতিবার (০৯ নভেম্বর) ফুতসুসহ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে আটক করে র্যাব-১।
এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৬৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ ইউরো ও বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, ‘গত একমাস আগে রজার্স নামে একজন নিজেকে জার্মানির নাগরিক দাবি করে জিয়াকে ফোন করে ১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা বলেন। এজন্য একজন খুব শিগগিরই বাংলাদেশে তার সঙ্গে দেখা করবেন। এর কয়েকদিন পর বোস্তাভো স্টিভস নামে জিয়াকে ফোন করে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে দেখা করতে বলেন ফুতসু। তারপর তাদের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয় এবং কিভাবে টাকা দেশে আনবেন, কোন খাতে বিনিয়োগ করবেন এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়’।
‘কয়েকদিন পর ফুতসু সিঙ্গাপুরে ব্যবসার কাজে যাচ্ছেন বলে জানান। তারপর সিঙ্গাপুর থেকে এসে আবার জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং আপাতত থাকা-খাওয়ার জন্য চার হাজার ডলার চান। জিয়াও এতো বড় বিনিয়োগের লোভে তাকে চার হাজার ডলার দেন। বিভিন্ন সময় সে (ফুতসু) জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেই ব্যস্ততা দেখাতো এবং গাড়ি দেখিয়ে বলতো রাষ্ট্রদূত গাড়ি পাঠিয়েছেন, তার সঙ্গে মিটিং আছে। এসব বিভিন্ন পন্থায় তার বিশ্বাস অর্জন করেন ফুতসু’।
‘এর কয়েকদিন পর ফুতসু ইউরোপে পাঠানোর জন্য আড়াইলাখ ইউরো চান জিয়ার কাছে। ডলারের বিনিময়ে ইউরো দেবেন এবং ২০ লাখ টাকা বেশি দেবেন বললে জিয়াও ইউরো যোগাড় করেন। ৩১ অক্টোবর রাতে ফুতসুকে নিজ বাসায় দাওয়াত দেন জিয়া। ফুতসু ও তার আরেক সহযোগী বাসায় যান এবং খাওয়া শেষে জিয়াকে ইউরোগুলো দেখাতে বলেন। জিয়া কাগজের প্যাকেটে মোড়ানো ইউরো দেখান। তখন তাদের মধ্যে একজন একটি তরল পদার্থের বোতল বের করেন এবং জিয়ার সামনে তা ফেলে দেন। এতে জিয়ার উপর খানিক তরল লাগে যা থেকে ঝাঁঝালো গ্যাস বের হয়। এটি বিষাক্ত উল্লেখ করে তাকে ফ্রেস হয়ে আসতে বলেন’।
‘জিয়া ফ্রেস হতে ওয়াশরুমে গেলে কাগজের প্যাকেট থেকে ইউরো নিয়ে সেখানে সাদা কাগজ রেখে দেন ফুতসু। জিয়া বের হয়ে এলে তারা বলে আজ ডলার আনেননি পরেরদিন এসে ডলার দিয়ে ইউরো নিয়ে যাবে। তখন তাদেরকে ওইদিনের মতো বিদায় জানান জিয়া’।
‘পরের দিন ফুতসু জিয়াকে একবার ফোন করলেও তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। তখন জিয়ার সন্দেহ হতে থাকে এবং বাসায় গিয়ে দেখেন ইউরোর পরিবর্তে সেখানে সাদা কাগজের বান্ডেল। এভাবে লোভে পড়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকার প্রতারণার স্বীকার হন তিনি’।
এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতারণার দায়ে র্যাব দুই শতাধিক বিদেশিকে আটক করেছে জানিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, এ অপরাধে অনেক সময় বিদেশিদের সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশিরাও জড়িয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার আটক চক্রটির সঙ্গে কোন বাংলাদেশি জড়িত ক- না বা আর কে আছেন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আটক তিনজনের মধ্যে দু’জনের পাসপোর্ট পাওয়া গেলেও একজনের কোনো ডকুমেন্টস পাওয়া যায়নি। বিনিয়োগের আশ্বাস প্রতারণার একটি মাত্র কৌশল। কিন্তু চক্রটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে লোকজনকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে থাকে।
এ চক্রের বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা হাবীবুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ বলেন, এ চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন সময় তার কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেজন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তিনি ভিকটিম নাকি তাদের সহায়তাকারী এ বিষয়ে পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
প্রতারণার অভিযোগে ঢাকায় তিন বিদেশি নাগরিক আটক
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৭
পিএম/জেডএস