সরেজমিন দেখা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর, পাইনশাইল ও ডগরী এলাকায় ফলসহ বিভিন্ন গাছপালা ও কৃষি আবাদ রয়েছে। কিন্তু ওইসব এলাকার সবুজ শ্যামল ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে ইটভাটা।
এলাকাবাসী জানান, মির্জাপুর ইউনিয়নের পাইনশাইল, মির্জাপুর ও ডগরী এলাকায় এ বছর নতুন করে প্রায় ১৮টি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ অনিয়মভাবে ফসলি জমিতে তৈরি করা হয়েছে ওইসব ইটভাটা। এনিয়ে প্রশাসনেরও কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
জানা যায়, ডগরী এলাকায় ধান ক্ষেত নষ্ট করে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ একর জমিতে এবছর নতুন করে গড়ে তোলা হয়েছে কাঁচা রস ব্রিকস ও মেসার্স স্টার ব্রিকসসহ প্রায় ৮টি ইটভাটা। মির্জাপুর ও পাইনশাইল এলাকায় প্রায় ১০টি নতুন ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া মির্জাপুর ইউনিয়নে নতুন-পুরানসহ ৭০টির বেশি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষি। দিনদিন কমে যাচ্ছে আবাদ। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ঝরে যাচ্ছে লিচু ও আমের মুকুল। বিভিন্ন গাছের ফল ও ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
গাজীপুর জেলায় প্রায় ২৫০টি থেকে ৩০০টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
ডগরী এলাকার কৃষক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, কৃষি কাজ করে সংসার চালাই। আমার একমাত্র আয়ের উৎস কৃষি। গত বছর ৭২ শতাংশ জমিতে টমেটো, ডাটা ও বেগুন চাষ করে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেছিলাম। এবছর ওই এলাকায় মেসার্স স্টার ব্রিকস ও কাঁচা রস ব্রিকসসহ প্রায় ৮টি নতুন ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ইটভাটার কারণে সবজির ফলন কমে গেছে। সঙ্গে কমেছে আয়। এ বছর ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পেরেছি। আয় কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কৃষি বাঁচাতে ও পরিবেশ রক্ষা করতে প্রশাসন ও সরকারের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নতুবা অল্প সময়ের মধ্যেই ফসলশূন্য হয়ে পড়বে গাজীপুর।
কাঁচা রস ব্রিকস ইটভাটার মালিক কফিল উদ্দিন বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করেছি এটা সত্যি। এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। এ ইটভাটায় পরিবেশের তেমন ক্ষতি হয় না। জমি ভাড়া নিয়ে ইটভাটা করা হয়েছে। প্রতি বিঘা জমির জন্য ২০ হাজার টাকা করে জমি মালিকদের ভাড়া দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সালাম জানান, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি ও কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। যারা আইন অমান্য করে ওইসব স্থানে ইটভাটা স্থাপন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে গাজীপুরের সব এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৮
আরএস/জেডএস