পরে বেতন চাইতে গেলে তাকে চাকরিচ্যুত করেন গার্মেন্টস মালিক। আবারও বেতনের জন্য যোগাযোগ করা হলে একটা তারিখ দেন।
শুধু মহিমা নয়, মেশতাক, নাছরিন, জান্নাতসহ আরও অনেকেই এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন এসকে ফ্যাশনের মালিক আবুল খায়ের মানিকের কাছে।
শুধু প্রতারণার ঘটনা নয় নারী শ্রমিকদের বেতনের বেলায় রয়েছে বৈষম্য। যেসব নারী শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন তাদের দেওয়া হচ্ছে অর্ধেক বেতন।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে কর্মী নিয়োগ দেন মানিক। নিয়োগপত্র ছাড়াই তাদের নিয়োগ দেন, পরে বেতন না দিয়ে দুই মাস পরে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেন। আর এক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের বেশি ছাঁটাই করা হচ্ছে।
ছাঁটাই হওয়া হতভাগ্য এক শ্রমিক মেশতাক। তিনি ও তার সহধর্মিনী জান্নাত এসকে ফ্যাশনে চাকরি করতেন। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দুই মাস কাজ করলেও বেতন পাননি। দুই মাস বেতন না পেয়ে মালিকের কাছে বেতন চাইতে যান। মালিক মানিক হুমকি দিয়ে তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করেন।
মেশতাক বাংলানিউজকে বলেন, আমি অন্য একটা গার্মেন্টসে কাজ করতাম। বেশি টাকার লোভ দেখালে এসকে ফ্যাশনে আসি। এখানে এসে জানতে পারি, দেড় দুই মাসের জন্য কর্মী নিয়োগ দেন, বেতন না দিয়ে ছাঁটাই করেন। বেতন চাইলে অনেককেই মারধর করেছেন মালিক মানিক। রামপুরা বাজারে বাটা শো-রুমের চতুর্থ তলায় এসকে ফ্যাশন। মানিক এই গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও স্বত্তাধিকারী। প্রায় ৫০টি মেশিন রয়েছে তার কারখানায়। প্রায় শতাধিক গার্মেন্টস শ্রমিক এখানে কাজ করে। তবে অল্প কিছু কর্মী ছাড়া বেতন না পাওয়ায় নিয়োগের দুই মাস পরেই তারা চাকরি ছেড়ে দেন বা তাদের ছাঁটাই করা হয়।
আরেক গার্মেন্টস কর্মী নাছরিন বলেন, প্রথমে কেউ বুঝতে পারে না, নিয়োগের সময় বলে কিছুদিন পরে নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড দেওয়া হবে। কিন্তু পরে আর দেয় না। এমনকি ছাঁটাইয়ের সময় হাজিরা কার্ডও নিয়ে রেখে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিল্ডিংয়ের অপর এক গার্মেন্টস কর্মী জানান, এসকে ফ্যাশনে ঝামেলা আছে, কোনো কর্মী বেশিদিন টিকে না।
চাকরিচ্যুত অন্য কর্মীরা জানান, মানিক নিজেকে অনেক প্রভাবশালী মনে করে। তার অন্য ব্যবসাও রয়েছে। তার গার্মেন্টসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যাতায়াত করেন। তার কর্মীদের কেউ বেতনের জন্য চাপ দিলে মামলা ঠুকে দেওয়ার ভয় দেখান।
এ বিষয়ে জানতে আবুল খায়ের মানিককে ফোন করলে প্রতিবেদককে নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দেন।
তিনি বলেন, আমি অনিয়ম করলে আইন রয়েছে শাস্তি দেওয়ার। আপনি কে যে কথা বলবো। কথা যদি বলতে হয়, সামনে আসেন, চেহারা না দেখলে আমি কথা বলি না। আমার অনেক সাংবাদিক নেতা পরিচিত রয়েছে, আমার উঠাবসা উপরের লেভেলে, সামনে আসেন।
প্রতিবেদক দেখা করতে চাইলে জানান, আমার সঙ্গে দেখা করলে অফিসে আসতে হবে। আমি যার-তার সঙ্গে দেখা করি না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিসের (বিলস) সদস্য সচিব সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন না দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো শ্রমিকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটলে, শ্রম অধিদপ্তরে আবেদন করতে হবে। শ্রম অধিদপ্তর সালিশ ডাকবে। সালিশের সিদ্ধান্ত শ্রমিক না মানলে শ্রম আদালতে মামলা করতে পারে। আমাদের সংগঠনে আসলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেএমইএ) সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ নাসির বলেন, নিয়োগপত্র ছাড়া কোনো কর্মীর কাজে যোগদান করা উচিৎ নয়। এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলে ওই প্রতিষ্ঠান যদি বিজেএমইএ'র অর্ন্তভুক্ত হয় তাহলে আমরা শ্রমিকের আবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৮
এমসি/আরআর