সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য এ বিষয়ে সামাজিক লজ্জা না ভাঙলে সচেতনতা আসবে না৷ তাই মেয়েরাও ঋতুস্রাব নিয়ে সচেতন হবে না৷ তাদের মতে দেশের অধিকাংশ নারী ঋতুস্রাবের সময় নিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহার করে না৷ সচেতনতা ছাড়াও এর পেছনে স্যানিটারি ন্যাপকিনের দামও বড় ভূমিকা পালন করে৷
বাংলাদেশের দরিদ্র নারী জনগোষ্ঠী বেশি বলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বদলে পুরোনো কাপড়, টিস্যু ব্যবহার করে যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ৷ নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্যানিটারি ন্যাপকিন সুলভমূল্যে সব স্তরের নারীর হাতে না পৌঁছানোকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অভাব বলে মনে করেন নারী চিকিৎসক ও নারী নেত্রীরা।
তারা জানান, ঋতুস্রাবের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রয়োজনীতা সম্পর্কে দেশে এক শ্রেণির নারী এখনও সচেতন হয়নি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশের প্রথম স্যানিটারি ন্যাপকিন ‘সেনোরা’। এরপর মোনালিসা, ফ্রিডম, জয়া, স্যাভেলন এবং ইভানাসহ নানা ব্র্যান্ডের প্যাড পাওয়া যায়। প্রতিটি কোম্পানির স্যানিটারি ন্যাপকিনের মূল্য দরিদ্র শ্রেণির নারীদের জন্য ব্যয়বহুল। এছাড়া সামর্থ্য থাকারপরও অনেকেই সচেতনতার অভাবে এর পেছনে অর্থ ব্যয় করতেও নারাজ।
প্যান্টি লাইনার প্যাড,আল্ট্রা-থিন প্যাড, রেগুলার প্যাড, ম্যাক্সি/সুপারপ্যাড, ওভারনাইট প্যাড, ম্যাটারনাল প্যাড; প্রতিটি ক্যাটাগরির স্যানিটারি ন্যাপকিন ১০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হয়।
অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক। এ গোষ্ঠীর নারীদের এখনও সক্ষমতা নেই স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করার। এদের সহায়তা করার জন্য দাতাগোষ্ঠীসহ কোনো সরকারি পদক্ষেপ নেই। আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সংগঠনের নিজ উদ্যোগে দারিদ্র মেয়েদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।
নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে সরকারের উচিত আরো মনোযোগী হওয়া। প্যাড ব্যবহারের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারিভাবে সুলভমূল্যে প্যাড বিক্রির ব্যবস্থা করাও উচিত বলেও জানান তিনি।
ফার্মগেটে ভাসমান সংসার রহিমার। তার সঙ্গে থাকে ১৪ বছর বয়সী মেয়ে তানিয়া। ১২ বছরে ঋতুস্রাব হয় তানিয়ার। মায়ের নির্দেশে সে পুরোনো নোংড়া কাপড় ব্যবহার করে।
স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিনের কথা বললে রহিমা জানান, আপা এটা কেনার টাকা তো আমাদের নেই৷ আমরা কী করবো? ওসব বড়লোকেররা ব্যবহার করেন।
স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গাইনী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. সালেহা বেগম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঋতুকালীন অবস্থায় স্যানিটারি ন্যাপকিন না পরে থাকলে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। হার্ড কাপড়, নোংরা কাপড় ব্যবহারের ফলে জরায়ুতে ইনফেকশন হয়। ভবিষ্যতে গর্ভধারণ জটিলতাসহ মরণব্যাধি ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনা অনেক। বাংলাদেশে বর্তমানে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর দিন দিন বাড়ছে।
‘সরকার-বেসকারি পর্যায়ে নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাজারে নারীদের জন্য যেসব স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি হয় সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত। নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার সুলভমূল্যে ন্যাপকিন বিতরণ করতে পারে' বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৮
এমসি/এএটি