এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনভিজ্ঞ কর্মকর্তা-কর্মচারী, যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, জনবল ঘাটতির কথা বলছে পদ্মাসেতু প্রকল্পের ‘প্যানেল অব এক্সপার্ট’।
২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোর সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর ৩১ ডিসেম্বর তারা কাজ শুরু করে।
সদ্য শেষ হওয়া পদ্মাসেতুর ‘প্যানেল অব এক্সপার্ট’র সভায় নানা বিষয়ের পাশাপাশি নদীশাসন কাজে ধীরগতির বিষয়টি উঠে আসে। গত রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) শেষ হয় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই সভা।
নদীশাসন সেতুর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মূল সেতু যে পথে হবে, সে নকশা অনুযায়ী নদীর গতিপথ যেন পরিবর্তন না হয়, কিংবা পাড়ের অপ্রত্যাশিত ভাঙন রোধে নদীশাসন করা হয়।
প্রথম দুই বছর এ কাজে গতি ছিলো না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করে, মূল সেতুর কাজ শেষে নদীশাসনের কাজ চললেও সমস্যা নেই।
বিশেষজ্ঞ প্যানলের সভা সূত্রে জানা যায়, কাজ সম্পন্ন করতে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে। কাজের গতি বাড়াতে যন্ত্রপাতি, টেকনিশিয়ান ও জনবল বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া চলতি মৌসুমেও নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি ড্রেজার আনার কথা আছে। কাজ পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনভিজ্ঞ কর্মকর্তা কর্মচারি, যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, জনবল ঘাটতির কথা সভায় বলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মাসেতুর নদীশাসনের কাজ চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো পাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় বিভিন্ন প্রশ্ন এসেছিল। কেননা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনের কাজে সিনোহাইড্রো’র নেতিবাচক কর্মকাণ্ড উঠে এসেছিলো। পদ্মাসেতুর নদীশাসনের কাজে এই প্রতিষ্ঠানটির দরপত্র ছিল সবচেয়ে কম। সিনোহাইড্রো দর দিয়েছিল ৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, বাকি দু’টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোরীয় হুন্দাই প্রতিষ্ঠান ১২ হাজার ১২১ কোটি টাকা ও বেলজিয়ামের জান ডে নাল ১৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা দিয়েছিল। সিনোহাইড্রো নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হুন্দাইয়ের চেয়ে চার হাজার কোটি টাকা কম দর দিয়েছিলো।
তিনি আরও জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন কাজে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে দেড় বছরে তাদের কাজের অগ্রগতি ছিল শতকরা ৩৫ ভাগের কাছাকাছি। পরে কাজ শেষ করার জন্য তারা সওজের কাছে ৫১১ কোটি টাকা দাবি করে বসে। দাবি আদায়ের জন্য তারা চার মাস কাজ করে বন্ধ রাখে। এর সঙ্গে তাদের অনানুষ্ঠানিক শর্ত ছিল পদ্মাসেতুর নদীশাসনের কাজ পেলে চার লেনের কাজ দ্রুত শেষ করে দেওয়া হবে।
সূত্রে জানা যায়, নদীর জাজিরা প্রান্তে ১১ দশমিক ৩ কিলোমিটার এবং মাওয়া প্রান্তে ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীশাসন করার কথা রয়েছে। এর কাজ বহুমাত্রিক। নদীর তলদেশ খনন, ব্লক ও জিওব্যাগ ফেলা, পাড় বাঁধাইয়ের কাজ করা এর অংশ। এই কাজে ১ কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিটের ব্লক, ২ কোটির বেশি বালুভর্তি জিওব্যাগ দরকার। নদী খননের ফলে ২১২ কোটি ঘনফুট বালু হস্তান্তর করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৮
আরএ