মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি অভিজাত হোটেলের সেমিনার কক্ষে ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং শেখ হাসিনার মানবতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে এ কথা বলেন তিনি।
ফ্রান্সভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্স-বাংলা সেন্টার ফর কম্যুনিকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এফবিসিসিডি) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরাসি জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য জ্য ফ্রাসোয়াঁ এমবায়ে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জ্য ফ্রাসোয়াঁ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। তাদের জন্য স্থায়ী পরিচয়পত্র দেয়া হলেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল হবে বলে মনে করেন তিনি। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের সে দেশে প্রত্যাবাসনের পর যেন আবার তাদের ফেরত পাঠানো না হয় সেদিকটি নিশ্চিত করার দরকার।
ফ্রান্স সরকার ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে উল্লেখ করে এ সংসদ সদস্য বলেন, আমরা এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান চাই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সে দেশের উপকূল অঞ্চলে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব মানবতার অঙ্গনে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ফ্রান্স সরকার সেটা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। এ সমস্যা সমাধানে ফ্রান্স সরকার সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে প্রধান অতিথি বলেন, দেশটির রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার পুননির্বাচিত হলে ভালো হয়। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল বলে মনে করেন তিনি।
ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে এ বিষয়ে যে সব প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন সেগুলোর ভিত্তিতেই সমাধান হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, শরণার্থীদের জন্য তিনটি রাস্তা খোলা থাকে। তাদের ফিরিয়ে দেয়া, তৃতীয় কোনো দেশে পাঠিয়ে দেওয়া অথবা সংশ্লিষ্ট দেশের মূল স্রোতে মিলিয়ে দেয়া। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে এ তিনটির একটিও প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। মিয়ানমারের সৃষ্ট এ সমস্যা তাদেরই সমাধান করতে হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আমাদের সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে যথেষ্ট মানবিক, তবে এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সম্ভব।
মূল প্রবন্ধে প্রবাসী সাংবাদিক ও রাজনীতিক ফারুক নওয়াজ খান বলেন, বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ যদি মিয়ানমারের মতো অমানবিক হতো তাহলে বিশাল সংখ্যক এ জনগোষ্ঠীর প্রাণ হারাতে হতো। তারা পেতো না কোনো আশ্রয়। প্রতিটি মানুষের রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার। কিন্তু মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের এ অধিকার হরণ করছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর অনুরোধ স্বত্ত্বেও। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে আসা বিশাল জনস্রোতকে অবহেলা করেননি। তিনি মাতৃস্নেহে তাদের আলিঙ্গন করেছেন। মানবতার আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়ে তিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। নিজ দেশের সীমিত সামর্থ্যের পর ও তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা সব নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে এ বিষয়টিকে তুলে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন।
সেমিনারের সফলতা এবং প্রধানমন্ত্রীর মানবতা নিয়ে টেলিফোনে বক্তব্য রাখেন সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল দাশ গুপ্ত। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ সেলিম, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রানা চৌধুরী, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহীন আরমান চৌধুরী, ফ্রান্স প্রবাসী সাংবাদিক অধ্যাপক শামসুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৮
টিআর/এসএইচ