ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘ভাই, থামেন, আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৮
‘ভাই, থামেন, আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান’ দুর্ঘটনাকবলিত উল্টে দুই যান। ছবি: বাংলানিউজ

ভালুকা (ময়মনসিংহ) ঘুরে এসে: চোখের পানি ধরে রাখার উপায় নেই। মহাসড়কের পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মানুষগুলো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। বাঁচানোর আকুতি নিয়ে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় লোকজন। হাতের ইশারায় বা চিৎকার করে যানবাহন থামাতে চাচ্ছেন।

দুর্ঘটনায় আহত রোগীর কথা শুনেই গাড়িচালক গতি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। মানবিকতাকে মুখ্য করেই স্থানীয়রা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কাছের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে।

কিন্তু কে শোনে কার কথা!

যানবাহনে ঠাসা মহাসড়কে হৃদয়বান কোনো চালকই মিলছে না। অতঃপর স্থানীয়রা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে মুমূর্ষু মানুষগুলোকে সেখানে তোলছেন। উদ্বেগ-উৎকন্ঠা না কাটলেও সামান্য হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছেন। দুর্ঘটনাস্থলে আহত ও স্থানীয়রা।  ছবি: বাংলানিউজমর্মান্তিক এই ঘটনা প্রবাহ শনিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার। ঘটনাস্থল ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার কাঁঠালিয়া এলাকার স্থানীয় রাসেল মিলের সামনের।

চারলেনের ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে দাঁড়িয়ে থাকা অটোরিকশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকারের সজোরে ধাক্কায় গুরুতর আহত হন সেটির চালকসহ ৪ যাত্রী। এতে অটোরিকশাটি ধুমড়ে-মুচড়ে যায়। প্রাইভেটকার উল্টে গেলেও সৌভাগ্যক্রমে রক্ষা পান চালক ও তিন যাত্রী। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। শনিবার সকালে ওই এলাকায় যাওয়ার পথে এসব দৃশ্য চোখে পড়ে।

প্রায় আধঘণ্টা সময় সেখানে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, অটোচালককে উদ্ধার করে সড়কের পাশে রাখা হয়েছে। অন্য যাত্রীদেরও খানিক দূরে রাখা হয়েছে। তাদের রক্তাক্ত শরীর। হয়তো তাদের মাঝেও বেঁচে থাকার কত আকুতি মিনতি।

স্থানীয় লোকজন অসহায় মানুষগুলোকে বাঁচানোর তাগিদেই নিজেদের মতো করে উদ্ধার তৎপরতা থেকে শুরু করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু যানবাহনের অভাবে তাদের সেখানে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছিলো।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের এই উদ্ধার তৎপরতায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্থানীয় একটি হোটেলের শ্রমিক মো. সেলিম (৩৮)। দুর্ঘটনাস্থল থেকে কাছেই তার হোটেল। বিকট শব্দ শুনেই হোটেল ফেলে এখানে এসেছেন। তার সঙ্গে তৎপরতা দেখা গেলো আসাদ ও জাহাঙ্গীর নামে আরো দুই যুবককে।

আহত এই মানুষগুলোকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বার বার ‘ভাই থামেন, আহতদের (মানুষগুলোকে) হাসপাতালে নিয়ে যান’ বলে আকুতি জানাচ্ছিলেন সেলিম। কিন্তু কোনো যানবাহনের চালকই সাড়া দিচ্ছিলেন না। আহতদের গাড়িতে তুলছেন এক যুবক।  ছবি: বাংলানিউজপরে সেলিমরাই একজোট হয়ে সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে অটোরিকশা থামিয়ে নিজেরাই ওদের হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।

হোটেল শ্রমিক সেলিম বাংলানিউজকে জানান, মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই এভাবে ছুটে এসেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে আহতদের হাসপাতালে নিতে পেরে তাদের জীবন বেঁচে গেলো। এটা অনেক আনন্দের।

সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে আসা ভালুকা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দুর্ঘটনায় আহত অটোরিকশার যাত্রীদের মাঝে রয়েছেন স্বামী স্ত্রী বশির আহমেদ (৩২) ও রোসেরা (২৯)।

তাদের বাড়ি জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলায়। চালক (৩০) ও অন্য যাত্রী (৬০) অজ্ঞাত। ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় ১১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৮
এমএএএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।