ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মাদারীপুর শহর হানাদারমুক্ত হয় ১০ ডিসেম্বর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৮
মাদারীপুর শহর হানাদারমুক্ত হয় ১০ ডিসেম্বর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ

মাদারীপুর: ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয় মাদারীপুর শহর। এর আগে জেলার অন্যান্য উপজেলা শত্রু মুক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

১০ ডিসেম্বর সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী। সেই থেকে দিবসটি মাদারীপুর মুক্ত দিবস হিসেবে পরিচিত।

 

জেলার মুক্তিযোদ্ধারা জানান, পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল প্রথম বিমান থেকে মাদারীপুরে গুলি বর্ষণ করে। ২৪ এপ্রিল সড়ক পথে শহরে এসে এ. আর. হাওলাদার জুট মিলে হানাদার ক্যাম্প স্থাপন করে। শুরু হয় মাদারীপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার। রাজাকার-আলবদরদের সহযোগিতায় মুক্তিকামী মানুষদের ধরে ধরে হত্যাযজ্ঞ চালায় হানাদার বাহিনী। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে গণকবর দেয় হানাদাররা।  

জানা গেছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার সবক’টি থানা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। এ কারণে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা জেলার এ. আর হাওলাদার জুট মিলের ভেতর এবং সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের চারদিকে থেকে ঘিরে রাখে। ৯ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী মাদারীপুর ছেড়ে ফরিদপুর চলে যাবে- এমন সংবাদ পেয়ে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজের পশ্চিমপাড় পর্যন্ত সড়কের চার কিলোমিটার জুড়ে অবস্থান নের মুক্তিযোদ্ধারা। ৯ ডিসেম্বর ভোর ৫টার দিকে পাক হানাদার বাহিনী গোলাবারুদ, অস্ত্র ও কনভয়সহ রাজাকার, আলবদর, আলসামস ও মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘটকচর ব্রিজ পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর আক্রমণ শুরু করেন। গ্রেনেড হামলা করতে গিয়ে হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয় সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা ১৪ বছর বয়সী সরোয়ার হোসেন বাচ্চু। তুমুলযুদ্ধ শেষে ১০ ডিসেম্বর বিকেলের সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্তে হেলে পরে ঠিক সে সময় আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী। বিজয় পতাকা ওড়ে মাদারীপুর শহরে। এ যুদ্ধে ২০ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা আত্মসমর্পণকারীদের অস্ত্র-শস্ত্র জব্দ করে ১০ ডিসেম্বর সারা রাত সমাদ্দার ব্রিজ অবরোধ করে রাখেন। পরদিন ১১ ডিসেম্বর সকালে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কলাগাছিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে। ১২ ডিসেম্বর তাদের মাদারীপুরে এনে সাব-জেলে বন্দি করে রাখা হয়।  

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শাজাহান হাওলাদার জানান, মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ হৃদয়ে লালন করে বর্তমান প্রজন্মের বেড়ে ওঠা উচিত। আর এই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। মাদারীপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্তমান শিশুকিশোরদের কাছে পৌঁছাতে কাজ করে যেতে হবে।  

মাদারীপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।