ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ক্ষমা পাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত নিমচন্দ্র ভৌমিক

আনোয়ারুল করিম, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১১
ক্ষমা পাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত নিমচন্দ্র ভৌমিক

ঢাকা: নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিমচন্দ্র ভৌমিকের ‘অকূটনীতিক’ সুলভ আচরণ ও বিভিন্ন অভিযোগ থেকে ‘সম্মানের সাথে’ ক্ষমা পেয়ে যাচ্ছেন।

নিমচন্দ্র ভৌমিকের বিরুদ্ধে সরকারের গঠন করা তদন্ত কমিটি গত ১৪ নভেম্বর পররাষ্ট্রসচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।



সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও ‘গুরুতর’ কিছু পাওয়া যায়নি এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ‘ওভারলুক’ (দেখেও না দেখার ভান) করে তাকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনের একজন প্রসিদ্ধ নেতা হিসেবে তাকে ‘বেনিফিট অব দ্যা ডাউট’ দেওয়া হচ্ছে।

নিমচন্দ্রকে ক্ষমা করে দেওয়ার কারণ হিসেবে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, ‘সত্তরের দশক থেকে তিনি পূজা পরিষদ নামে একটি সংগঠনকে জাতীয় সংগঠনে পরিণত করেছেন। বাঙালি ও বাংলাদেশের প্রতি তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে রাষ্ট্রদূত করা হয়। এখন উদ্ভুত কারণে তাকে আর অসম্মান করা যাবে না। ’   

‘চুক্তিভিত্তিক নিযুক্ত এ রাষ্ট্রদূতের চুক্তির মেয়াদ শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্তের মধ্যদিয়ে সরকার তাকে রেহাই দিচ্ছে বলেই সূত্রের মন্তব্য।

বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের গঠন করা তদন্ত কমিটি গত ৩১ অক্টোবর নেপালের কাঠমান্ডু যায়। ৪ নভেম্বর তারা দেশে ফেরেন।

চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্তদলে ছিলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (শৃঙ্খলা ও আইন) রইসুল আলম মন্ডল ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক সুব্রত রায় মৈত্রী।

ঈদের ছুটির আগেই তদন্ত কমিটি একসঙ্গে বসে প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর ১৪ নভেম্বর তারা প্রতিবেদনটি পররাষ্ট্রসচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েসের কাছে জমা দেয়।     

সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গত মে মাসে করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ একটি প্রতিবেদনের যুক্তি খ-ন করা হয়।

‘ভারতীয় সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল জ্যাকবকে ভারতীয় পতাকা উড়িয়ে নিয়ে ভ্রমণ’ বিষয়ে তদন্ত কমিটি যথাযথ কোনও প্রমাণ পায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই অভিযোগটিকেই সবচেয়ে গুরুতর বলে তদন্তের আগে অভিহিত করেছিল সংশ্লিষ্টরা।  

অন্য দেশের পতাকা নিয়ে গাড়িতে ভ্রমণ ছাড়াও নারী কেলেঙ্কারি, ভিসা দিতে হয়রানি, শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিতে ঘুষ, এমনকি নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলানোর মতো অভিযোগ উঠে নিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে।

তিনসদস্যের তদন্ত কমিটি এসব অভিযোগের ব্যাপারেও সন্দেহাতীত প্রমাণ পায়নি বলেই দাবি সূত্রের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অণুবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৯ সালে নিয়োগের পর থেকে নানা অভিযোগ আসে নেপাল থেকে। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন উইং বিষয়টি তদন্ত করে। গত মে মাসে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা পড়ে।

রিপোর্টে তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর সুপারিশ করা হয়। কিন্তু দেশের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের নেতৃত্ব এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতাদের তদবিরে তা চাপা  দেয়া হয়।

তদন্ত রিপোর্ট আমলে নিলেও পররাষ্টমন্ত্রী, সচিব কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউই তা স্বীকারই করতে রাজি হননি প্রায় দু’মাস।

জুন ও জুলাই মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ১৯ জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের তদন্ত হবে। ’

তবে এরপরও কেটে যায় প্রায় ৫ মাস। এরপর গত অক্টোবর মাসে গঠন করা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি।

 


বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।