সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় কয়েলদারের গলা ফাটানো হাঁকডাক। এই ব্যাপারী বড় বড় মাছ, ব্যাপারী দাম বলেন, দাম বলেন ব্যাপারী, এই ব্যাপারী কত, কত কত.. বলেন।
একজন ব্যাপারী বলে ওঠেন ৫শ’ (প্রতিকেজি)। দাম হাঁকা শুরু করেন কয়েলদার। হাঁকতে হাঁকতে ৭শ’ তে উঠে যায় প্রতিকেজি মাছের দাম। ৭শ’, ৭শ’, ৭শ’ আর নাই বলে মাছ ঢেলে ফেলেন কয়েলদার। নির্ধারিত টাকা বুঝে দিয়ে খুচরা ব্যাপারী মাছ নিয়ে মেলায় তার নির্দিষ্ট দোকানে চলে যান।
আরও পড়ুন>>>>>এক বাঘাইড়ের দাম লাখ টাকা!
অনেকটা অন্ধকার থাকতেই এভাবে মেলায় বসা আড়তে আড়তে পাইকারি দরে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় জ্যান্ত মাছ বিক্রি শুরু হয়। চলতে থাকে প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ। তবে মেলায় বসা পাইকারি আড়ত থেকে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে মাছ বিক্রি করা হয় না বললেই চলে।
বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় বসা পাইকারি আড়তগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিকিকিনির এমন দৃশ্য নজরে কাড়ে।
ছয়তারা মৎস্য আড়তের মালিক শাহাদৎ হোসেন বাবু বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যেক বছর ঐতিহ্যবাহী এই মেলা সামনে রেখে আগের দিন সন্ধ্যার মধ্যেই মেলা এলাকায় মূল সড়কের পাশে পাইকারি আড়ত বসানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
তিনি জানান, এবার মেলায় প্রায় ১৫টির মতো পাইকারি আড়ত বসেছে। এসব আড়তে বিভিন্ন যানবাহনে করে দূরে বিভিন্ন মোকাম থেকে রাতেই মাছ চলে এসেছে। ভোর ৪টার আগ থেকেই এসব আড়ত থেকে পাইকারি দরে মাছ বিক্রি শুরু হয়। খুচরা ব্যাপারীরা মাছ কিনে তাদের নির্ধারিত দোকানে নিয়ে তা বেচাবিক্রি করছেন।
এই আড়তের মালিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোর ৪টা থেকে দুপুর ১২টা নাগাদ এই ৮ ঘণ্টায় এসব পাইকারি আড়তে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো মাছ বিক্রি হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে এসব পাইকারি আড়তে এবার কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। কারণ ১১টার মধ্যে তার আড়তেই প্রায় ৩৫ লাখ টাকার মতো মাছ বিক্রি হয়েছে।
এরমধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ওজনের বাঘাইড়, রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার, বিগহেড, কালিবাউস আইড়, বোয়াল, চিতল, পাঙ্গাস, গাঙচিলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। পাইকারি আড়ত থেকে এসব মাছ কিনে খুচরা ব্যাপারী মেলায় আসা ক্রেতা সাধারণের কাছে তা বিক্রি করেন।
আড়তদার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গেলো বছরেও মাছের দাম ভাল ছিল। এবারেও মাছের দাম ভালো। তিন বছর আগে মেলায় মাছের দাম খুব খারাপ ছিল। সেবার সব ব্যবসায়ীকে কমবেশি লোকসান গুনতে হয়েছে।
প্রত্যেক বছর এই মেলায় চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, নাটোর, সিংড়া, সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়া, নওগাঁ, মহাদেবপুর, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, গাইবান্ধা, রনবাঘা, আত্রাই, মোলামগাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহর থেকে চাষি এবং ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ নিয়ে আসেন। এবারো কিন্তু তার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
এসব আড়তদাররা বাংলানিউজকে জানান, মানুষের কাছে জ্যান্ত মানুষের চাহিদাই আলাদা। তাই বিশেষ ব্যবস্থায় মাছগুলো জ্যান্ত অবস্থায় এখানে নিয়ে আসেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এজন্য তারা গাড়ির ভেতর বিশেষ ব্যবস্থায় জলাশয় বানিয়ে নেন। যানবাহনে লাগিয়ে নেন ছোট শ্যালো মেশিন।
সেই মেশিন দিয়ে গাড়ির ভেতর বানানো জলাশয় থেকে পানি তুলে আবার সেই পানি গাড়ির ভেতরের জলাশয়ে দেন। গাড়ি থেকে মাছ নামানোর আগ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ফলে মাছ জ্যান্ত থাকে। ভালো দামও পাওয়া যায়।
ব্যবসায়ী আজম সরকার বাংলানিউজকে জানান, মেলা উপলক্ষে দূর-দূরান্তের বড় বড় চাষি ও ব্যবসায়ীরা প্রায় ৩-৪ মাস আগ থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। সেই হিসেবে তারা মাছ প্রস্তুত করতে থাকেন। বাছাই করা মাছগুলো মাঝারি ও ছোট পুকুরে আলাদাভাবে পরিচর্যা করেন। এরপর মেলার আগের দিনে পুকুর থেকে মাছ ওঠান। তারপর গাড়িতে ভরে জ্যান্ত মাছ নিয়ে মেলায় চলে আসেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯
এমবিএইচ/এএ