বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কুমিল্লা র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার শেখ বিল্লাল হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আটক চার অপহরণকারী হলেন- ফেনী জেলার নোয়াবাদ এলাকার মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে এয়াকুব আলী মিন্টু ওরফে মিলন (৩১), তার স্ত্রী মোছা. জেসমিন (২৪), বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার চাটমোহর থানার আফাজ মণ্ডলের মেয়ে আফরোজা আক্তার আশা ওরফে সুমি ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের কুলাউড়া উপজেলার মুনসুরপুর গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে মো. আ. মোমিন (৩০)।
র্যাব জানায়, কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ওই কিশোরীকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার লাকসাম থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১৯ ফেব্রুয়ারি অপহৃত ভিকটিমের মা কুমিল্লা র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর ক্যাম্পে এসে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং জানান যে, কিশোরীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তারা মুক্তিপণ দাবি করছে। এ বিষয়ে ভিকটিমের মা ৮ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর কুমিল্লা র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনা করে দেখা যায়, যে ৫টি মোবাইল থেকে কল করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে, সবগুলোই চুরি করা মোবাইল। এরপর র্যাব বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ শুরু করে ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় আবারও অভিযান পরিচালনা করে। এসময় সেখানে একটি আস্তানা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে চার অপহরণকারীকে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীরা জানায়, মিলন কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম থেকে লাকসামে এসে ভিকটিমের পাশের বাসায় একটি রুম ভাড়া নেয়। সেখানে মিলন, তার স্ত্রী (জেসমিন) ও তার মাকে নিয়ে বাসা ভাড়া নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই তারা ভিকটিমকে টার্গেট করে এবং তার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির প্রয়াস চালায়। ভিকটিম চঞ্চল প্রকৃতির একটি মেয়ে হওয়ায় সে অপহরণকারীদের আপ্যায়নে মুগ্ধ হয়ে যায় এবং অপহরণকারী দম্পতির সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। সম্পর্কের একপর্যায়ে মিলন চট্টগ্রামে অবস্থানরত তার সহযোগী এয়াছিন, তার কথিত স্ত্রী সুমি ও মোমিনদের ফোন দিয়ে ভিকটিমের কথা জানায় এবং তাকে অপহরণ করে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি চায়। সবার অনুমতি পেয়ে মিলন ও জেসমিন ভিকটিমকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে। তারই প্রেক্ষিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জেসমিন ভিকটিমকে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং বলে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবে। ভিকটিম সরল বিশ্বাসে মিলন ও জেসমিনের সঙ্গে যায়। একপর্যায়ে কৌশলে ভিকটিমকে নেশা জাতীয় পানীয় পান করায় এবং লাকসাম স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠিয়ে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়। এরপর অপহরণকারীরা ভিকটিমের মায়ের নম্বরে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে।
একপর্যায়ে অপহরণকারীরা ভিকটিমকে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। তার মতের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজ করতে চাপ দিতে থাকে। ভিকটিম রাজি না হওয়ায় তাকে চরম নির্যাতন করা হয় এবং জোরপূর্বক ইয়াবা সেবন করিয়ে নিজেরা ধর্ষণ করে ও অন্যদের দিয়ে ধর্ষণ করায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৯
আরবি/