ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জাল ও নৌকা মেরামত করেই সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৯
জাল ও নৌকা মেরামত করেই সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা জাল মেরামত করছেন জেলেরা। ছবি-বাংলানিউজ

চাঁদপুর: মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ থাকায় পদ্মা-মেঘনা নদী এখন জেলে শূন্য। মাছ ধরার ব্যস্ততা না থাকায় জাল ও নৌকা মেরামত কাজেই ব্যস্ত এখন ৫১ হাজার জেলে পরিবারের অধিকাংশ জেলে। 

ইলিশ রক্ষার্থে আগে যখন সরকার মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতো তখন তা সেভাবে আমলে নিতেন না জেলেরা। তবে এখন সচেতনতা বেড়েছে জেলেদের মধ্যে।

ছোট ইলিশ শিকার করবে না, বড় হলে তারাই শিকার করবে-এমন স্লোগান জেলেদের মুখে মুখে। কিন্তু অন্য কোনো কাজে আগ্রহ, সুযোগ বা পারদর্শিতা না থাকায় মাছ ধরার নিষিদ্ধ এ সময়ে কোনো রোজগার থাকে না জেলেদের। তাই এ সময়ে সরকারি সহযোগিতা বাড়ানোর দাবি অধিকাংশ জেলে পরিবারের। মাছ ধরা নিষেধ।  সেজন্য নৌকাগুলো ডাঙায় রাখা হয়েছে।  ছবি-বাংলানিউজ

চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর, লক্ষ্মীপুর, ইব্রাহীমপুর ও পৌরসভার নদী উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলেপাড়াগুলো খুবই নীরব। আড়ৎগুলোতে কোনো লোকজন নেই। টেবিলগুলো উল্টে রাখা হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী দুই মাসের ছুটি মনে করে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন।

হানারচর ইউনিয়নের হরিণা ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শত শত নৌকা ডাঙায়। কেউ নৌকা, আবার কেউ গুল্টি সুতার জাল মেরামত করছেন। একই অবস্থা দেখা গেলো সাখুয়া নদী সংলগ্ন খালে। দীর্ঘ লাইনে শত শত নৌকা ওপরে উঠিয়ে রাখা হয়েছে। এখানেও নৌকা মেরামত করছেন জেলেরা। দুই মাস পরে আবার ইলিশ আহরণে নামবেন তারা।

ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ভূমি মেঘনার পশ্চিম পাড়ে। ওই এলাকার মানুষের পেশাই হচ্ছে কৃষিকাজ ও মৎস্য আহরণ। ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর এ দুই মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। এসময়টায় বেশির ভাগ মৎস্যজীবীই বেকার হয়ে পড়েন। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত জেলেদের খাদ্য সহয়তা হিসেবে ৪০ কেজি করে চাল দেয় সরকার। তাতেই তাদের সংসার চলে কোনো মতে। ইলিশের অন্যতম প্রধান অভয়াশ্রম মেঘনার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে পশ্চিম পাড়ে প্রায় ৩০টি চর রয়েছে। সব চরের বাসিন্দাদের অবস্থা একই।

হরিণা এলাকার জেলে ইসমাইল বেপারী বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধন করলেও জেলেরা এখন অনেক সচেতন। দুই মাস অপেক্ষার পরেই ইলিশ শিকারে নামবেন জেলেরা।

ওই এলাকার প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজ সৈয়াল বাংলানিউজকে বলেন, জাটকা নিধন বন্ধ করায় গত কয়েক বছর ইলিশের সংখ্যা বেড়েছে। জেলেরা এখন সরকারি আইন কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে জেলেদের সরকারিভাবে যে সহায়তা দেওয়া হয় তা সঠিক পরিমাপে পান না জেলেরা। এ বিষয়ে প্রশাসনের লোকজনের আরো তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন।  জাল মেরামত করছেন জেলেরা।  ছবি-বাংলানিউজ

সাখুয়া গ্রামের জেলে আবুল কাশেম অভিযোগ করে বলেন, আমরা যারা তালিকাভুক্ত প্রকৃত জেলে তারা কখনই নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে মাছ আহরণ করি না। কিন্তু এক শ্রেণির মৌসুমী জেলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জাটকা নিধন করেন। তাদের বিরুদ্ধে এলাকার জনপ্রতিনিধিরাই ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাদের কারণে আমাদেরও বদনাম হয়।

লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের দোকানঘর এলাকার জেলে জহির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ১ মার্চ থেকে নৌকা ডাঙায় উঠিয়ে রেখেছি। এখন দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালাই। দুই মাস শেষ হলে আবারও নৌকা নিয়ে মাছ শিকারে নামবো। ছোট মাছ আহরণ করলে জেলেদেরও ক্ষতি, সরকারেরও ক্ষতি। বড় হলে আমরাই বেশি দামে এই ইলিশ বিক্রি করবো।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষার্থে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি অত্যন্ত কঠোর ভূমিকা পালন করছে। জাটকা নিধন করতে দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রতি আগ্রহী করারও চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৯
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।