২০১৬ সালে ২৬ মার্চ সহপাঠী কাজী সাদ নূরের সঙ্গে বিয়ে হয় বৃষ্টির। নূরের বাসা যশোরের পুরাতন কসবা এলাকায়।
গেল মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সহপাঠী থেকে স্বামী কাজী শাদ নূরের সঙ্গে বিয়ের ৩ বছর উদযাপন করেন বৃষ্টি। তবে বৃষ্টি-নূর দম্পতি কি জানতো এটাই তাদের জীবনের শেষ বিয়ে বার্ষিকী কিংবা দু’দিন পরেই পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিতে হবে। কিন্তু সত্যিই ভ্যাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাই ঘটলো।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) অগ্নিকাণ্ডের রাতে আরএফ টাওয়ারের ১৮ তলার সিড়ি থেকে বৃষ্টির মরদেহ পাওয়া গেছে বলে পরিবারকে জানিয়েছে উদ্ধারকারীরা।
নিহত শেখ জারিন তাসনিম বৃষ্টি যশোর শহরের বেজপাড়া বনানী সড়কের মোটর পার্টস ব্যবসায়ী শেখ মুজাহিদুল ইসলামের মেয়ে এবং একই শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার কাজী ইরাদ আলীর পুত্রবধূ।
নিহত বৃষ্টির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, যশোর বিএনএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৬ সালে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানবসম্পদ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
ঢাকার হোটেল রেডিসনের সহকারী ব্যবস্থাপক ও যশোরের ছেলে কাজী শাদ নূরের সঙ্গে তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বৃষ্টি। যদিও স্বামী কাজী শাদ নূর বৃষ্টির সহপাঠী ছিলেন। দু-জনের পরিচয়ের সূত্র ধরেই বিয়ে। বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রীর চাকরির সুবাদে ঢাকা খিলক্ষেতে বসবাস করতেন তারা।
নিহত বৃষ্টির দেবর (স্বামীর ভাই) কাজী নিপুন বাংলানিউজকে বলেন, ভবনে আগুন লাগার পর ভাবী (বৃষ্টি) তাৎক্ষণিকভাবে ভাইকে (বৃষ্টির স্বামী) ফোন করে ঘটনার কথা জানান। ভাই ভাবীকে ভবনের ছাদে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে ভাবী জানাচ্ছিলেন, ধোঁয়ায় কোনো দিকে যাওয়া যাচ্ছে না। এরপর থেকে ভাবীর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একটানা ফোনে চেষ্টা করতে করতে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ফোনে কল ঢুকলে অপরপ্রান্ত থেকে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী রিসিভ করে ভাবীর মৃত্যু খবর জানান।
ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মী আরও জানান, আগুনে ভাবীর ফোন নষ্ট হয়ে গেলেও সিম কার্ড ভালো থাকায় ওই উদ্ধারকর্মী সিমটি নিজের ফোনে ঢুকিয়ে ছিলেন বলে দ্রুত মরদেহটি শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও আরএফ টাওয়ারের ১৮তলার সিঁড়িতে মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানান উদ্ধারকারী দলের ওই কর্মী। উদ্ধারকর্মীদের ধারণা, আগুনের তাপে ও ধোঁয়ার তার মৃত্যু হতে পারে।
এদিকে, শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুর ২টায় বৃষ্টির মরদেহ যশোরে এসে পৌঁছালে পরিবারের সদস্যরা শোকে বিহব্বল হয়ে পড়েন। বৃষ্টির মা নিনা ইসলাম আহাজারি করছিলেন, আর বিলাপ করছিলেন।
দুপুরে যশোর শহরের চৌরাস্তা জামে মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাজা এবং বিকেলে আসরের নামাজের পর বেজপাড়ায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে সন্ধ্যায় কারবালা কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৯
ইউজি/এসএইচ