মিথি ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বনানীর এফ আর টাওয়ারে অবস্থিত ট্যুারিস্ট অ্যান্ড হেরিটেজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। টাওয়ারের দশম তলায় ছিলো তার অফিস।
আগামী ২ এপ্রিল গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে বিবাহবার্ষিকী উদযাপনের জন্য দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছিলেন পরিবারের একমাত্র সন্তান মিথি। কিন্তু তার আগেই হারিয়ে গেলেন তিনি। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মেয়ে আমার বাড়িতে আগেই চলে এসেছেন। তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে।
একমাত্র সন্তান মিথিকে হারিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন মা নাসরিন সুলতানা ফেন্সী। তার পাশেই ছিলেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। কিন্তু তাকে শান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা সবাই যেন হারিয়ে ফেলেছেন।
মিথির বড় চাচা সালাউদ্দিন সরদার বাংলানিউজকে জানান, বনানী এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় মিথি তার অফিসেই ছিলেন। অনেকের মতো সেও সেই টাওয়ারে আটকা পড়ে। বাঁচার জন্য অন্য সবার মতো সেও আকুতি জানায়।
তিনি জানান, মিথি ফুপাতো ভাই মৌসুমকে ফোন করে জানায় ‘আমি আটকা পড়ে আছি, তোমরা আমাকে সেভ করো’। একইভাবে স্বামী রায়হানুলকেও বাঁচার জন্য ফোন করে মিথি। এসময় তার স্বামী তাকে টাওয়ারের উপরে তলার দিকে যেতে বলেন।
ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই বাবা মাসুদুর রহমানকেও ফোন করে মিথি। বাবাকে মিথি ফোনে বলে, ‘বাবা আমি আগুনে পুড়ে যাচ্ছি, তুমি আমাকে বাঁচাও বাবা। কিন্তু মিথির কোন ফোনকল কাজে আসেনি। কারণ সে কোনভাবেই বের হতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে ওই টাওয়ার থেকে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে না ফেরার দেশে চলে যান মিথি।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল থেকে মিথির বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজন ও আশপাশের লোকজনের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার মা। ওদিকে বাবা মাসুদুর রহমান মেয়ের মরদেহ আনতে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তখনও মিথির মরদেহ গ্রামে পৌঁছায়নি। সকাল ১১ টার দিকে মিথির মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে এসে পৌঁছায়। এসময় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
এর আগে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের ভোটার আইডি কার্ড ও হাতের ব্যবহৃত আংটি দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন বাবা মাসুদুর রহমান। এরপর ঢাকায় মিথির প্রথম জানাজা অুনষ্ঠিত হয়। এরপর গ্রামের বাড়িতে আনার পর বাদ জুমা দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন করা হয়।
বড় চাচা সালাউদ্দিন সরদার আফসোস করে বলেন ‘মিথি তার স্বামীকে সহায়তা করতে ও আগামী দিনগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতেই চাকরি নেয়। স্বামী-স্ত্রী মিলে সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছিলো। কিন্তু মিথির সেই চেষ্টা চেষ্টাই থেকে গেলো।
তানজিলা মৌলি মিথি ২০০৯ সালে সান্তাহার সরকারি হার্ভে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয থেকে এসএসসি ও ২০১১ সালে সান্তাহার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ ৫১তম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে এফ আর টাওয়ারে লাগা অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৯
এমবিএইচ/ওএইচ/