তিনি জানান, পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠির মাধ্যমে সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার ও মামলা পিবিআইয়ে হস্তান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পিবিআইর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানের কাছে সব নথিপত্র হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো জানান, সোনাগাজী থানায় নতুন করে কাউকে এখনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
এদিকে সোনাগাজীতে অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি ও ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলাসহ সাতজনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
নুসরাত জাহান রাফির পরিবারে অভিযোগ ছিল, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তারা আস্থা রাখতে পারছে না। হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে মেয়েটিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনাকে পুলিশ ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি মামলার এজাহার নিয়েও পুলিশ কূটচাল চেলেছে। ওসি মেয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল সাধারণ মানুষও।
গত ৬ এপ্রিল মাদরাসার ছাদে দুর্বৃত্তদের আগুনে রাফি অগ্নিদ্বগ্ধ হওয়ার ঘটনার শুরু থেকে সোনাগাজী মডেল থানা ওসি মোয়াজ্জেমের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। শুরুতে ঘটনার তদন্ত, জড়িতদের ধরতে অনীহা ও রাফি অগ্নিদ্বগ্ধ হওয়ার ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয় থানা পুলিশ। এছাড়া প্রথম মামলায় কাউকে আসামি না করলেও পরবর্তীতে সংশোধন করে কারাবন্দি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ ও বোরখা পরিহিত মুখোশধারি অজ্ঞাত ৪ জনকে আসামি করা হয়।
এর আগেও ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর ঘুষ কেলেঙ্কারি, স্বর্ণ চুরি, মামলার আলামত চুরি করে বিক্রি করে দেওয়া, সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া, টোকেন দিয়ে নম্বরবিহীন সিএনজি অটোরিকশা থেকে মাসোয়ারা আদায়, ভুয়া মামলা দিয়ে অর্থ আদায়, স্কুল ছাত্রের উপর নির্যাতন, নিরীহ গ্রামবাসীর উপর হামলা, ব্যবাসায়ীসহ মুচি, কামার, কুমার থেকে চাঁদাবাজির হাজারো অভিযোগের বোঝা মাথায় নিয়ে ছাগলনাইয়া মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার হলেন মো. মোয়াজ্জেম হোসেন।
এর আগে জামায়াত কানেকশনসহ নানা অভিযোগে ফেনী মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার হন দুর্নীতিবাজ এ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার নিকটাত্মীয় পরিচয় দিলেও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন- এর কোনো সত্যতা নেই। সোনাগাজীতেও যোগদানের পরপরই আওয়ামী লীগ নেতারা তার ঘুষ-দুর্নীতির প্রতিবাদে মাঠে নামেন। কোনো প্রতিকার না পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা চুপসে যান। তবে তার সময়কালীন সোনাগাজী চুরি-ডাকাতি- চাঁদাবাজী- ধর্ষণ অন্যসময়ের তুলনায় বেড়ে যায় বলে তাদের দাবি।
৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যায় নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করেছে এমন সংবাদ দিলে সে ওই বিল্ডিংয়ের চারতলায় যায়। সেখানে মুখোশপরা ৪/৫জন ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। সে অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামালা দায়ের করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
এর আগে ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজকক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
এসএইচডি/এএ