ঢাকা, শনিবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নুসরাতের আসনটি ফাঁকা, মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনেরা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
নুসরাতের আসনটি ফাঁকা, মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনেরা

ফেনী: বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল)  নুসরাত জাহান রাফির ফিকহ দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দেয়ার কথা। যথা নিয়মে পরীক্ষায় বসেছে তার সহপাঠীরা। কিন্তু নুসরাত নেই, খালি পড়ে আছে পরীক্ষার হলে তার আসনটিও।

শোকাহত তার সহপাঠীরাও। পরীক্ষার হলও যেনো শোকে মুহ্যমান।

ভাগ্যের নির্মম শিকার নুসরাত কফিনবন্ধি হয়ে শেষবারের মতো বাড়ি ফিরছে। শেষবারের মতো তার মরদেহ দেখতে অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজন-প্রতিবেশীরা।  

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সোনাগাজী পৌরশহরের উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের মেজো মৌলভী বাড়িতে এমন চিত্রই দেখা গেছে।  

সকাল ১০টার দিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ৮ নম্বর কক্ষে ফিকহ দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা চলেছে; অন্য সহপাঠীরা পরীক্ষায় দিচ্ছেন। কিন্তু নুসরাত জাহান রাফির খালি পড়ে রয়েছে খালি, তার রোল নম্বর ১৪৯৬১৪।  

আরাফাত হোসেন নামের নুসরাতের এক সহপাঠী বলেন, নুসরাত আপু আমাদের মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি আর মাদ্রাসায় আসবেন না এটি ভাবতেই আমাদের কষ্ট হচ্ছে।

নুসরাতের সহপাঠী নাবিলা জানান, ‘আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না রাফি আর পরীক্ষা দিতে আসবে না। রাফি ছিলো আমাদের প্রিয় বান্ধবী। তার জন্য আমাদের মনও ভারাক্রান্ত। পরীক্ষা দিতে ইচ্ছে করছে না।  

গত পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নুসরাত জাহান রাফি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নুসরাতের মরদেহ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।  

এদিকে নুসরাতের নৃশংসভাবে আগুনে ঝলসে হত্যার প্রতিবাদে ফেনী শহরের ট্রাংক রোড এলাকায় চলছে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। সচেতন ছাত্র সমাজের ব্যানারে এ মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন শত শত শিক্ষার্থী।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা।  

এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।  

পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।  

সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোরও পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু সবার প্রার্থনা-চেষ্টাকে বিফল করে বুধবার রাতে চলেই গেলো ‘প্রতিবাদী’ নুসরাত।

এদিকে ওই ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তারই জেরে মামলা করায় নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো হয়। ওই মামলার পর সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এসএইচডি/এমএ
পড়ুন>>
** 
বাঁচানো গেলো না নুসরাতকে
** নুসরাতের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড়​
** শেষ চিঠিতেও লড়াইয়ের কথা বলেছিলো নুসরাত​​
** নুসরাতের মৃত্যুতে, অপরাধীর ক্ষমা নাই: এমপি মাসুদ

** নুসরাতের মৃত্যুতে বারবার অজ্ঞান হচ্ছেন দুই ভাই​
** নুসরাতের মৃত্যুতে এমপি শিরিন আখতারের শোক​
** সোনাগাজী সাবের পাইলট মো. স্কুল মাঠে হবে নুসরাতের জানাজা​
** মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক​
** নুসরাতের মৃত্যুতে স্তব্ধ ফেনী, দোষীর ফাঁসি দাবি
** শেষ চিঠিতেও লড়াইয়ের কথা বলেছিলো নুসরাত
**অপরাধের সঠিক বিচার হচ্ছে না বলেই এমন নৃশংসতা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।