ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কড়া নাড়ছে বৈশাখ, নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা

মাহফুজুর রহমান পারভেজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
কড়া নাড়ছে বৈশাখ, নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা দম ফেলানোর ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। ছবি: বাংলানিউজ

নারায়ণগঞ্জ: নববর্ষের আর মাত্র একদিন বাকি। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মৃৎশিল্পীরা পহেলা বৈশাখ উৎসব সামনে রেখে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। তারা প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাইতো ছেলে বুড়ো থেকে শুরু করে পরিবারের সবাই একে অপরকে কাজে সাহায্য করছেন। একাজে পুরুষদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই নারীরাও। নারীরা তাদের হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় রাঙ্গিয়ে দিচ্ছেন খেলনা ও তৈজসপত্রগুলোকে। এসব মাটির জিনিসই উঠবে বৈশাখী মেলায়।

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের কুমারপাড়ায় সরেজমিনের ঘুরে দেখা গেছে, বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে মৃৎশিল্পীরা বাহারি রং বেরংয়ের খেলনা ও গৃহস্থালির তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বছরের অন্যান্য সময়ে তাদের ব্যস্ততা কম থাকলেও পহেলা বৈশাখে তাদের ব্যস্ততা একটুও বেশিই বেড়ে যায়।

   

মৃৎশিল্পী অমিত পাল জানান, পহেলা বৈশাখ সন্নিনিকটে হওয়ায় বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় তাদের কাজের ব্যস্ততা একটু বেশি। মাটির তৈরি তৈজসপত্রগুলোতে বিক্রির জন্য প্রস্তুতকরা হচ্ছে। পরে বৈশাখী মেলাতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হবে। তবে পর্যাপ্ত মাটির অভাবে এসব খেলনা ও গৃহস্থালির তৈজসপত্র তৈরিতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ কারণেই পেশাটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।  

অখিল পাল নামে আরেক মৃৎশিল্পী বাংলানিউজকে জানান,  তার স্ত্রী রেখা পাল একজন বাকপ্রতিবন্ধী। সামনে বৈশাখ তাই স্বামীর সঙ্গে রেখা মাটির খেলনা ও গৃহস্থালির বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।  

রঞ্জিত পাল নামে এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, তিনি ঢাকা জেলার কাকরাইল এলাকার থেকে কুমারপাড়াতে মাটির খেলনা ও গৃহস্থালির তৈজসপত্র পাইকারিভাবে কিনতে এসেছেন। তিনি এখান থেকে মালামাল কিনে নিয়ে ঢাকার পহেলা বৈশাখী মেলাতে বিক্রি করবেন।  

তিনি আরো জানান, মৃৎশিল্পী বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে আছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু বর্তমানে তারা এখন বিলুপ্তির পথে। তাদের রক্ষা করতে হলে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি। এছাড়া স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুমারপাড়ার অরুণ পাল, বর্তমানে বিশ্ব পালসহ প্রায় ২০টি পরিবার এ পেশায় সংযুক্ত রয়েছে বেশ কয়েক যুগ ধরে। মৃৎশিল্প তাদের বাপ দাদার পেশা। তাই অনেকে এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। আবার অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্যান্য পেশায় ঝুকে পড়েছেন। আবার কেউ এ পেশার পাশাপাশি অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ পেশায় অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন।  
      
রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি লায়ন মীর আব্দুল আলীম বাংলানিউজকে বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। আর মৃৎশিল্প আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে আঙ্গাআঙ্গিভাবে জড়িত। মৃৎশিল্পীরা তাদের হাতের ছোঁয়ায় অনেক অভূতপূর্ব ও রকমারি মাটির জিনিস তৈরি করেন। মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সচেতন সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।  

রূপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী(ইউএনও)কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বাংলানিউজ জানান,  মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনও সহযোগিতা করবে।  
    
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।