ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ফণি শনিবার (০৪ মে) দুপুর নাগাদ গভীর নিম্নচাপে (৫০-৬০ কিলোমিটার গতি) নেমে আসবে। বিকেল নাগাদ নিম্নচাপে (৪০-৫০ কিলোমিটারর গতি) নেমে আসবে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপ ও নিম্নচাপের কারণে সিকিম, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হবে। তবে আসাম, মেঘালয় ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ৫ মে পর্যন্ত উত্তর ও উত্তরাঞ্চলে কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে।
আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ ফণী নিম্নচাপে পরিণত হয়ে শান্ত হবে এবং ময়মনসিংহ অঞ্চল হয়ে ভারতের আসামে গিয়ে ঠেকবে। দিনভর গভীর নিম্নচাপ ও নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া বয়ে যাবে কোথাও কোথাও।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, ৫ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও বজ্রসহ ভারী, কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ৮৯ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে তাকে অতিভারী বৃষ্টিপাত বলা হয়।
অতিপ্রবল থেকে দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় আকারে শনিবার সকাল ৬টা থেকে সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চলে আছড়ে পড়ে ‘ফণী’।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বর্তমানে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং সারাদেশে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। তবে সাগর খুবই উত্তাল।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে এজন্য ৭ নম্বর নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এছাড়া কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নম্বর দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৪ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে উড়িষ্যার পুরীতে সবশেষ তাণ্ডব চালিয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে খড়গপুর হয়ে স্থলপথে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে ফণী। কমতে থাকে দাপট। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, নদীয়া, কলকাতাসহ কোথাও কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি। তবে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি বয়ে গেছে। গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় বাংলাদেশ পর্যন্ত আসতে আসতে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে ফণী।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলগুলোর কয়েকটি স্থানে ৫ মে নাগাদ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আসাম, মেঘালয় এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের অতিভারী বৃষ্টিপাত হলে এসব অঞ্চলের প্রধান নদী বিশেষত সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, যাদুকাটা ও তিস্তা নদীর পানির সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পাববে। এতে কোনো কোনো নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম হয়ে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস