অন্যদিকে, এ ঘটনায় বাসের চালক নূরুজ্জামান (৩৯) ও হেলপার (সহকারী) লালন মিয়াসহ (৩৩) মোট পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরা বলছেন, সব যাত্রী নেমে যাবার পর তানিয়া নিজেকে একা দেখে চলন্ত বাস থেকে দৌড়ে নেমে যাচ্ছিলেন।
নিহত শাহিনুর ওই উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ ও নিহত তরুণীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার (৬ মে) বিকেলে ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ‘স্বর্ণলতা’ নামে একটি বাস বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পথে বিমানবন্দর স্টেশন এলাকা থেকে বাসে ওঠেন তানিয়া। রাত ৮টার দিকে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সব যাত্রী নেমে পড়েন। শাহিনুরের বাড়ি কটিয়াদীর বাহেরচর হলেও বাসস্ট্যান্ড থেকে বাহেরচরের দূরত্ব অনেক। রিকশায় করে যেতে এক ঘণ্টার ওপর সময় লাগে। কিন্তু পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাহেরচরের রিকশায় ১০ মিনিটের পথ। সে কারণে শাহিনুর কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে না নেমে পিরিজপুর যেতে আগ্রহী হন।
ওই বাসে তখন তানিয়া একাই ছিলেন। পরে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী এলাকায় পৌঁছালে ওই তরুণী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। একপর্যায়ে বাস থেকে লফিয়ে পড়ে বাঁচার চেষ্টা করেন তানিয়া। পরে তাকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ওই বাসের স্টাফরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত তানিয়ার চাচা নাসির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, বাসের ৪-৫ জন লোক তানিয়াকে ধর্ষণ করেছে। পরে তাকে হত্যা করে স্থানীয় হাবিব ফার্মেসির সামনে ফেলে দেয়। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে তাকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কটিয়াদী থানার পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় বাসের চালক নূরুজ্জামান ও হেলপার লালন মিয়াসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মাশরুকুর রহমান খালেদ বাংলানিউজকে জানান, বাসের চালক নূরুজ্জামান ও হেলপার লালনসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তারা পুলিশকে জানিয়েছে, তানিয়ার কানে হেডফোন লাগানো ছিল। সব যাত্রী নেমে যাবার পর তানিয়া নিজেকে একা দেখে চলন্ত বাস থেকে দৌড়ে নেমে যাচ্ছিলেন। এ সময় হেলপার বাধা দিলে তিনি বাস থেকে লাফিয়ে পড়েন। পরে তাকে স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে নিয়ে যায় তারা। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ওই বাসে করেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কটিয়াদী হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ রাতেই বাসটির স্থানীয় দুই কর্মীসহ তিনজনকে আটক করে। পরে তাদের সহায়তায় বাসের চালক ও হেলপারকে গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকা থেকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেনি।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই শাহিনুরের মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে শাহিনুরের ঠোঁটের ডান পাশে এবং বাম চোখের নিচে চামড়ায় ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। দুই হাতে আঁচড়ের চিহ্ন ও শরীরের আরও কিছু অংশে ফোলা ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৯
জিপি/এসএইচ