বুধবার (৩ জুলাই) বিকেলে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের একটি হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় পেছন থেকে জড়িতদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনিদের বিচার করেছি, এটা ঠিক।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করেছিল কারা? যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি বা মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর ছিল, যারা চক্রান্ত করেছিল। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলবো, এর সঙ্গে আমাদের নিজেদেরও কিছু লোক সম্পৃক্ত হয়েছিল ক্ষমতার লোভে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যেতো।
এ সময় গত ৭০ বছরে চীনের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, চীন ৭০ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে। এই ৭০ বছর আগে চীনও কিন্তু একটা দরিদ্র দেশই ছিল। আজকে সেই চীন বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
চীনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তাদের ইতিহাস জানা, ধীরে ধীরে তাদের যে উন্নতি, সেটা জানা। তাদেরও অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এখনো বাধা আছে। এই অঞ্চল বা এশিয়ার কোনো দেশ বিশ্বে এক নম্বর অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক, এটা অনেকে চাইবে না। সেই বাধা আমরা দেখি।
জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলার গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সে স্বপ্ন অর্জন করাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। এটাই আমাদের চেষ্টা কিভাবে বাংলাদেশটাকে গড়ে তুলবো। এমন একটা বাংলাদেশ গড়ে তুলবো যেখানে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না।
বাজেট বরাদ্দ ও উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে বিদেশি অর্থের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন বাজেটের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। যে বাজেট করি, এই বাজেটে কিন্তু বিদেশি অনুদানের অংশ হচ্ছে মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ এমন একটা সময় ছিল যখন বাজেটের সিংহভাগই আসতো অনুদান হিসেবে।
সব কাজ করার মানসিকতা রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করছি, সেইসঙ্গে উৎসাহিত করছি। একেবারে দুই পাতা পড়লেই যে কৃষিকাজ করা যাবে না, এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে, এই মানসিকতা থাকতে পারবে না। সবাইকে সব কাজ করতে হবে।
আধুনিক প্রযুক্তি শেখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাণিজ্য কূটনীতির কথা উল্লেখ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কূটনীতিটা শুধু রাজনৈতিক নেই, কূটনীতি এখন অর্থনৈতিকও, ব্যবসা-বাণিজ্য। বিনিয়োগ আনা। শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তবে দেশকে ভুললে চলবে না। দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সবাই বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। কিন্তু আমাদের অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। প্রশংসা শুনে বসে থাকলে চলবে না, এগিয়ে যেতে হবে, আরও কাজ করতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ২৯ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে, বিগত ১০ বছরে তার চেয়ে বেশি কাজ আওয়ামী লীগ সরকার করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, যারা স্বাধীনতা চায়নি, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছে, এখনো পাকি প্রেমে বিভোর হয়ে থাকে, তারা ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হবে কিভাবে?
স্বাধীনতার পক্ষের দল ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলে দেশ উন্নত হয়, প্রমাণটা আপনারা দেখেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু লোক আছে, যাই করি তারা কিছু দেখতে পায় না। আসলে তাদের উদ্দেশ্য এরা গণতন্ত্র চায় না, কারণ গণতন্ত্র না থাকলে তাদের সুবিধা হয়, বিশেষ মূল্যায়ন হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিম। আর চীনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার শামসুল হক।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৯
এমইউএম/এইচএ/