সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় তিস্তা নদী ভাঙনের শিকার সামলা বেওয়া একটু ঠাঁই পেতে এমন আকুতি জানান।
সামলা বেওয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় বালুর বাঁধ এলাকার মৃত বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী।
এক সময়ের প্রভাবশালী গৃহিনী সালমার ঠাঁই হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। গত ১২ বছরে ২০ বার তিস্তার হিংস্র থাবায় বিলীন হয়েছে বসতভিটা। কখনো থাকতে হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। কখনো রাস্তা বা বাঁধে।
সর্বশেষ তিন সপ্তাহ আগে ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়ি সরিয়ে কুটিরপাড় বালুর বাঁধে আশ্রয় নেন সালমা। বিধিবাম সেখানেও ঠাঁই হয়নি তার। গত কয়েক দিনের প্রবল ভাঙনে বালুর বাঁধের প্রায় ২৫-৩০টি বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে।
সালমার এক চালা ঘরটি একদম তিস্তার মুখে পড়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে রাতেই গিলে খাবে তিস্তা। তাই নদীর ধারে বসে কাঁদছেন বৃদ্ধা সালমা।
ওই বাঁধের আব্দুল হাফি মিয়ার বসতভিটার অর্ধেক বিলীন হয়েছে। বাকিটুকু ঘোড়ার গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এক বান ঢেউটিন ও এক হাজার টাকার ত্রাণ না দিয়ে সরকার দ্রুত নদী খনন করে দুই পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করুক। যাতে আর কাউকে বসতভিটা হারাতে না হয়। আমরা যাতে স্থায়ীভাবে বসতবাড়ি করে থাকে পারি।
নদীর ধারে বসে কাঁদছেন আলেয়া বেওয়া (৫৬)। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই নদী যৌবনের আয় রোজগার গিলে খেয়েছে। এখন বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষা করে গড়া বসতভিটাও গিলে খাইল। আর কি খাবার বাকি থাকিল। ’
সালমা বেওয়া, হাফি বা আলেয়া বেওয়া শুধু নয় গত ৪৮ ঘণ্টায় ওই বাঁধের প্রায় ১২/১৫টি বাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। তিস্তা পাড়ের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে ভাঙন আতঙ্ক। ভাঙনের তীব্রতায় দিশেহারা মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তা পাড়ে। মানুষ ছুটছে মাথা গোঁজার মতো একটু ঠাঁই পেতে। কিন্তু মিলছে না ঘর তোলার মতো জায়গা।
কেউ কেউ চড়া সুদে ঋণ নিয়ে জমি বন্ধক নিচ্ছেন বাড়ি করতে। কিন্তু নিচু জমি এবং পানি থাকায় ঘর তুলতে পারছেন না। ফলে খোলা আকাশে কাটছে তাদের রাত। সরকারিভাবে পুনর্বাসনের কথা বললেও তা কাগজ কলম ঠিক করতে কেটে যাবে কয়েক সপ্তাহ। এরপর হয়তো মিলবে এক বান ঢেউটিন ও এক হাজার টাকা। যা দিয়ে একটি পরিবার পুনর্বাসন কখনই সম্ভব নয় বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গত মাস থেকে এ ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি বসতভিটা বিলীন হয়েছে। কুটিরপাড় বালুর বাঁধটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। এটি ভেঙে গেলে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ে চলে যাবে নদী। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আহসান হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মিত ভাঙন কবলিত এলাকার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়ন কেন্দ্রে যেতে বলা হলেও তারা যাচ্ছে না। তাদের পুনর্বাসন করা হবে। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয়ন কেন্দ্রে গেলে তাদের সব ব্যবস্থা করা হবে। কুটিরপাড় বাঁধে ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। খুব দ্রুত এ কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৯
এনটি