তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, জমি উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। দখল জমি উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেললাইনের বাইরে থাকা বেশির ভাগ জমিই বেদখলে চলে গেছে। রেলের উদাসীনতায় দখল করা জমি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর রেলের জমি বেদখলে থেকে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে দখল হওয়া জমির পরিমাণ। তারা বলছেন, রেলের জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অভিযান শুরু করলেই দখল করা জমি উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
রেলের ভূসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে সারাদেশে রেলের মোট ৮ হাজার ৭৮১ একর জমি বেদখলে রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর আনন্দবাজার এলাকায় রেলওয়ের ২.৮৭ একর জায়গা দখলে নিয়ে ৭ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করে মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। একযুগ ধরে এ জায়গা উদ্ধারে ভূসম্পদ শাখার সংশ্লিষ্টরা তৎপরতা চালিয়ে গেলেও শুধু রাজনৈতিক কারণে জায়গা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশেই প্রভাবশালীরা এভাবে জমি দখল করে রেখেছে।
জানা যায়, দখল জমি উদ্ধারে রেলওয়ের নিজস্ব আধুনিক সরঞ্জাম কিংবা কোনো বুলডোজার নেই। যখন অভিযান পরিচালনা করা হয়, তখন বুলডোজারসহ সরঞ্জাম ভাড়া করা হয়। এছাড়া দিনভিত্তিক মজুরির শ্রমিক ভাড়া করে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এটা উদ্ধার অভিযান থমকে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রেলওয়ের তথ্যমতে, রেল লাইনের দু’পাশে ১০ ফুট জায়গা খালি রাখার নিয়ম রয়েছে। দু’পাশের দুই ফুট জায়গায় রেল আইন অনুযায়ী সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। সরকারি নির্দেশনা ছাড়াও যে কোনো দুর্ঘটনা এড়ানো ও বাড়তি সতর্কতার জন্য এমন বিধান রয়েছে। অথচ রাজধানীর মতো দেশের জেলা শহরগুলোর কোথাও খালি জমি রাখার চিত্র দেখা যায়নি।
জানা যায়, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেলপথের দু’পাশ দখলে রয়েছে। লাইন ঘেঁষে বস্তি, দোকান, বাজার, ছাপড়া ঘর, রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নামে পাকা এবং আধাপাকা স্থাপনা রয়েছে। অনেক এলাকায় বাস-ট্রাকের স্ট্যান্ড বানিয়ে জমি দখল করা হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশ বলছে, জায়গা উদ্ধারের বিষয়টি ভূ-সম্পত্তি বিভাগের, দেখভাল করে রাখার দায়িত্বও তাদের।
রেলওয়ের ভূসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, সারা দেশে রেলওয়ের জমি রয়েছে ৬১ হাজার ৮৬০ দশমিক ২৮ একর। এর মধ্যে রেলের অপারেশন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৬৮ দশমিক ৫১ একর জমি। এছাড়া লাইসেন্স করা ও লিজ নেওয়া জমি রয়েছে ১৩ হাজার ২৩ একর। দখল অব্যবহৃত জমির পরিমাণ ১২ হাজার ৫৪৩ একর। রেলের জমি একেবারেই বেদখল হয়ে গেছে ৫ হাজার একরের মতো। রেলের দখলে অব্যবহৃত জমি রয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ১০৭ একর। এর মধ্যে কৃষিজমি ১০ হাজার ৭১৬ দশমিক ৮১ একর।
তথ্যমতে, গত ২ মে সাত বছরের জেল-জরিমানার বিধান রেখে ‘রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন ২০১৬-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কিন্তু তারপরও রেলের বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধারে কঠোর হচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
ভূসম্পদ শাখার সূত্র বলছে, ঢাকায় দখলে থাকা জমির এক শতাংশের মূল্য ৩০ লাখ টাকা আর পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের এক শতাংশ জমির মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে দখলে থাকা জমির মূল্য প্রায় ১ লাখ হাজার কোটি টাকা, এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে রেলওয়ের নতুন মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, দখলে থাকা জমি উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। সম্প্রতি রাজধানীর তুরাগ নদী এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। সুতরাং অভিযান চলছে না, সেটা সঠিক নয়। তবে আমরা জমি উদ্ধারে আরো কঠোর হবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
টিএম/এএ