সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিতাস নদীর তীরে আবর্জনার পাহাড় গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে আনন্দ বাজার, মেড্ডা বাজার, বাঁশ বাজার ও কারখানা ঘাটসহ তীরবর্তী এলাকাজুড়ে বাসা-বাড়ি ও বাজারের বিভিন্ন পচা ময়লা-আবর্জনাসহ পশুর বর্জ্য ফেলে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা অনেকটাই ক্ষোভের স্বরেই অভিযোগ করে বলেন, এক সময় মানুষ তিতাস নদীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে নদীর পাড়ে ভিড় করতো। আর এখন ময়লার সয়লাবে চলাফেরাই করা যাচ্ছে ন। এখান দিয়ে মানুষকে নাকে কাপড় দিয়ে চলাচল করতে হয়, নতুবা দম বন্ধ হয়ে আসে। আনন্দ বাজার নদী ঘাটে একটি ঐতিহ্যবাহী নৌ ঘাট রয়েছে যেখানে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ চলাচল করে থাকে। আবর্জনার গন্ধে তাদেরও চলাচল করতে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করলেও তারা এ বিষয়ে কোনো নজর দিচ্ছেন না।
স্থানীয়দের দাবি, দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষায় দ্রুত সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। নতুবা জনস্বাস্থ্যের হুমকি প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকবে।
নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা আলেয়া বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আবর্জনার স্তূপকে ঘিরে থাকা মশা-মাছি বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করে রোগবালাই ছড়াচ্ছে। ঘরে মেহমান এলে তাদের ভালোভাবে সমাদরও করা যাচ্ছে না। এতে লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। আর পচা গন্ধে শিশুরা রোগাক্রান্ত হচ্ছে।
নৌযাত্রী জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আনন্দ বাজার নৌকা ঘাটে এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখায় নৌ-যাত্রীদের অনেক কষ্ট হয়। বাজারে চলতে অনেক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
পথচারী পুষ্প পাল বলেন, আবর্জনার ভাগাড়ে জনস্বাস্থ্যের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। কারণ এই বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে মিশে যাওয়ায় নদীর মাছ বিষাক্ত হচ্ছে। সেইসঙ্গে নদীর পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় জনসাধারণের গোসল করা থেকে শুরু নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এই দুর্ভোগ পৌরসভা দেখেও যেন না দেখার ভান করছে।
১৫০ বছরের পুরাতন এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রায় ৩ লাখ লোকসংখ্যা থেকে প্রতিমাসে ৩০০ টন কঠিন ও তরল বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এসব বর্জ্য পরিশোধেনের ব্যবস্থা নেই প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায়। কঠিন বর্জ্য ১ হাজার থেকে ১২শ তাপমাত্রায় পোড়ানোর নিয়ম রয়েছে সরকারিভাবে। কিন্তু নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে জীবাণুবাহী বর্জ্য নদীর পাড় ও যত্রতত্র ফেলায় পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
তবে পৌর মেয়র নায়ার কবির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বর্জ্য শোধনাগারের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ সমস্যা থাকবে না। এছাড়াও ময়লা-আবর্জনা যাতে নদীতে না ফেলা হয় সেজন্য স্থানীয়দের সচেতন করা হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ অফিসার রুনায়েত আমিন রেজা বাংলানিউজকে বলেন, নদীর ওপর ও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় নদীর বাস্তুসংস্থান নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি দূষিত হচ্ছে। এতে নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমরা পৌরসভার সঙ্গে কথা বলে জনসচেতনতা তৈরি করছি, ময়লা যেন নদীতে ফেলা না হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নেবো।
জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা জনসচতেনতা তৈরি করতে পৌরসভাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপকারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে।
যে তিতাস নদীর সৌন্দর্য্য ঠাঁই করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়, সেই তিতাস নদীর প্রাণ ও সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত উদ্যোগ নেবেন বলে প্রত্যাশা সবার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৯
এমএমইউ