কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে শেষ পর্যন্ত আর বড় ভাইয়ের বাসা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি তিনি। বাস চালকের হেয়ালিপনা ও অসাবধানতায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে শিল্পীকে।
সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে এক হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে যায় শিক্ষার্থী শিল্পী আক্তারের প্রাণ। বোনের অকাল মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ ভাই আমির হোসেন।
শনিবার (৩ আগস্ট) সকালে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতেই ভাঙা ভাঙা স্বরে ওপাশ থেকে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি শিল্পীর ভাই আমির হোসেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে শিল্পী তৃতীয়। মা অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। বছর তিনেক আগে বাবাও। শিল্পী চট্টগ্রাম মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগে পড়তো। ওখানেই হোস্টেলে থাকত। আমি চাকরির জন্য স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুরের সারদাগঞ্জ এলাকায় অফিসের কোয়ার্টারেই থাকি। ’
‘কম্পিউটার বিভাগে পড়ে, তাই কিছু দিন ধরেই একটা ল্যাপটপ কিনে দেওয়ার বায়না ধরেছিল আমার বোন। প্রয়োজন জেনে কিনে দিতে রাজি হতেই শিল্পী আমার বাসায় আসতে চায়। এখানে বেড়াবে, নিজে পছন্দ করে ল্যাপটপ কিনে তারপর ঈদে সবার সঙ্গে বাড়ি ফিরবে-এমনটাই কথা ছিল। ’
আমির হোসেন জানান, কথামত শুক্রবার রাতেই চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয় শিল্পী। সকাল ৭টার দিকে সায়দাবাদ পৌঁছালে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে শিল্পীর কথাও হয়। পরে মৌমিতা পরিবহনে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হয় তার বোন। এরপর সন্ধ্যায় দুর্ঘটনায় বোনের মৃত্যুর সংবাদ পান তিনি।
এসব কথা বলতে বলতেই কান্নায় আবারও কণ্ঠরোধ হয়ে আসতে থাকে ভাই আমিরের। সবশেষ বলেন, ‘বোনের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। দোয়া করবেন। ’
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কস্থ বাংলাদেশ বেতারের উচ্চ শক্তি প্রেরণ কেন্দ্রের সামনে এসে হঠাৎ ব্রেক করেন মৌমিতা পরিবহনের চালক। এতে বাসের ভেতর দরজার কাছে বসে থাকা যাত্রী শিল্পী আক্তার ছিটকে সড়কে পড়ে যান। এসময় বাসটি তাকে চাকায় পিষ্ট করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর স্থানীয়রা চালক জাহিদ মন্ডলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
এসএ/