ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ফেনীতে লাভের আশায় দেশীয় খামারিরা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৯
ফেনীতে লাভের আশায় দেশীয় খামারিরা

ফেনী: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ফেনীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। কোরবানির জন্য জেলার কয়েকশ ছোট-বড় খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পশু। কোরবানির জন্য হাতে আর মাত্র দু’দিন থাকায় ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন হাটগুলোতে। ইতোমধ্যে জমে উঠেছে ফেনীর বিভিন্ন হাট।

বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) রাতে জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের চাঁদগাজী স্কুল অ্যান্ড কলেজে পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, এখনও বাজার পর্যবেক্ষণে রয়েছেন ক্রেতারা। বিগত বছরের তুলনায় দামও বেশি।

তবে জেলার তিনদিকে ভারতের সীমান্ত থাকায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ করার শঙ্কা রয়েছে বলেই জানান খামারিরা।  

অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ না করলে এবার লাভবান হবেন, এমনটাই আশা স্থানীয় খামারিদের। এদিকে প্রতিবারের মতো এবারও সীমান্তে অবৈধ উপায়ে গরু প্রবেশরোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। এছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর হাট তদারকির জন্য মেডিক্যাল টিমও গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বাংলানিউজকে জানায়, কোরবানি উপলক্ষে জেলায় ছোট-বড় খামারগুলোতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছে খামারিরা। গ্রামগঞ্জের প্রতিটি বাড়িতে দুই থেকে তিনটি করে গরু মোটাতাজাকরণ করা হলেও জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কয়েকশ খামারে গরু মোটাতাজাকরণের কাজ করা হচ্ছে। ছোট-বড় মিলিয়ে জেলায় চার হাজার ২২২টি খামারে ২৩ হাজার ৩০৮টি ষাঁড়, ৩৯ হাজার ২৭২টি মহিষ ও ৯৪৬টি গাভীর পরিচর্যা করা হচ্ছে।  

ফেনীর খামারগুলোতে শংকর, ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, সিন্ধি, হরিয়ানা ও দেশী জাতের গরু সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। তবে বেশি মাংস উৎপাদনে সক্ষম ও বীজ সহজলভ্য হওয়ায় ফ্রিজিয়ান, আর স্বাদ বিবেচনায় দেশি জাতের গরুই বেশি পালন করছে খামারিরা।

জেলার সবচেয়ে বড় গরুর খামার গড়ে তুলেছেন পরশুরাম পৌরসভার মেয়র সাজেল চৌধুরী। তার খামারে বর্তমানে রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক গরু। গত এক বছর যাবত শুধু কোরবানির ঈদে বিক্রির উদ্দেশ্যেই গরুগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। যার সম্ভাব্য বাজার দর হিসেবে ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। সাজেল চৌধুরীর গরুর খামার এলাকায় ব্যাপক পরিচিত লাভ করায় স্থানীয়ভাবে গরুর চাহিদা পূরণ করে জেলার বাইরেও তা বিস্তৃতি লাভ করেছে। তাই কোরবানির পশু কিনতে আশপাশের অনেক এলাকা থেকেই ক্রেতারা আসছে এ খামারে। অন্যদিকে তাকে দেখে গরুর খামার করার দিকে ঝুঁকছেন বেকার যুবকরা।  

সাজেল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, খামারের জন্য নওগাঁ, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে উন্নতজাতের গরু কিনে আনি। আমার খামারের গরুগুলোকে কোনো ধরনের কৃত্রিম ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না। প্রাকৃতিকভাবেই এগুলোকে লালন-পালন করা হচ্ছে। এ গরুর খামার পরিচালনার কাজে দুই শিফটে ২৪ জন অভিজ্ঞ কর্মচারী রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, গত দুই বছর ধরে গরুর খামার দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হয়েছি। খামারে বর্তমানে প্রায় পাঁচ শতাধিক গরু রয়েছে। আসন্ন কোরবানির ঈদেই এগুলো বিক্রি করা হবে। ভবিষ্যতে বড় আকারের একটি ডেইরি খামার করার পরিকল্পনা রয়েছে।

আরেক খামারি পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে চলতি বছরের শুরুতে প্রায় আড়াই কোটি টাকায় তিন শতাধিক গরু কিনেছি। খামারের প্রতিটি গরুকে কাঁচা ও শুকনো খড়, ভুষি খাইয়ে পালন করা হচ্ছে। প্রতিটি গরু পালনে দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গরু ব্যাপারীরা এসে শতাধিক গরু কিনে নিয়েছেন। গত বছর প্রায় চার কোটি টাকার গরু বিক্রি করেছি। আশা করছি এবারও পারবো।  

এদিকে জেলার বড় খামারিদের গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কা কিছুটা কম থাকলেও ছোট ছোট খামারিদের শঙ্কা ভারতীয় গরু।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন খামারি বাংলানিউজকে জানান, ঈদ ঘনিয়ে এলে সীমান্ত এলাকার ভারতীয় কাঁটাতারের ফাঁক গলিয়ে আসতে থাকে ভারতীয় গরু। স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির তত্ত্বাবধানে ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহযোগিতায় একাধিক চক্র সীমান্ত দিয়ে দেশে গরু প্রবেশে সহায়তা করছে। অনেকটা রুগ্ন ও অপুষ্ট এসব গরু বাজারে কমমূল্যে বিক্রি করা হয়। এতে দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে পরশুরাম-বিলোনিয়া সীমান্ত দিয়ে যাতে গরু চোরাচালান না হতে পারে সে ব্যাপারে সজাগ রয়েছেন বলে জানান পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেলুল কাদের।  

অন্যদিকে ফেনীর ৪ বিজিবি’র পরিচালক (অধিনায়ক) লেফট্যানেন্ট কর্নেল নাহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু প্রবেশ বন্ধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিগত কয়েক মাসে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের সময় প্রচুর ভারতীয় গরু জব্দ করেছে বিজিবি। গরুর পাশাপাশি সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের সময় গরু মোটাতাজাকরণের বিপুল পরিমাণ ওষুধও জব্দ করেছে বিজিবি।

ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ইসমাঈল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, কোরবানিতে জেলায় এবার ৮৫ হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে। তবে খামারিদের হিসেবে ৮৮ হাজার পশু বাজারে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও ফেনী জেলার পাঁচটি পৌরসভা ও ছয়টি উপজেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ১৩৯টি পশুর হাট বসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৯ 
এসএইচডি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।