সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। পন্টুনে তিল ধারনের ঠাঁই নেই।
এছাড়া লঞ্চের যাত্রীদের হয়রানিরোধে নৌ-পুলিশের একাধিক দল নদীতে ও টার্মিনালে দায়িত্ব পালন করছে। টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, কোস্টর্গাড, আনসার সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। মাঝ নদী থেকে যাত্রীদের লঞ্চে ওঠা বন্ধে নৌ-পুলিশ তৎপর রয়েছে।
এদিকে ঈদে অতিরিক্ত যাত্রীর ভিড়ে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে শুরু করে আশেপাশের এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, ইসলামপুর রোড, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজার, বংশাল পর্যন্ত যানজটের কারণে যাত্রীদের পায়ে হেঁটে টার্মিনালে আসতে দেখা গেছে।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাদের কেবিনের অগ্রিম টিকিট কাটা নেই, তারা যাত্রা নিশ্চিত করতে লঞ্চ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে টার্মিনালে এসে লঞ্চে ওঠেন। কেবিনের অগ্রিম টিকিট কেনা যাত্রীরা আসেন লঞ্চ ছাড়ার বড়জোড় ঘণ্টাখানকে আগে।
বরিশালগামী এম ভি টিপু-৭ লঞ্চের যাত্রী হৃদয় বাংলানিউজকে বলনে, লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। কিন্তু যানজট ও লঞ্চে জায়গার কথা চিন্তা করে মিরপুর থেকে দুপুর ১২টায় র্টামিনালে এসেছেন। যানজটের কারণে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট টার্মিনালে আসতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছে। কিন্তু এসে দেখেন, লঞ্চের ডেকেও বসার সুবিধামতো জায়গা নেই। তবুও শান্তি লঞ্চে উঠতে পেরেছি। সবার সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যেতে পারছি।
সুন্দরবন-১০ লঞ্চের যাত্রী জিহাদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। কেবিনের টিকিট পাইনি। তাই দুপুর থেকে লঞ্চে এসে বসে আছি। তখন এসে কোনোরকমে একটু জায়গা পেয়েছি। এখনতো তিল পরিমাণ জায়গা নেই। এছাড়া বরিশাল যেতে ডেকের ভাড়া লঞ্চের কর্মচারীরা ২৫৫ টাকা দাবি করছেন। কিন্তু গত সপ্তাহেও তিনি ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসেছেন।
এবিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব-উল- ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এবারের ঈদযাত্রার ব্যবস্থাপনা গত বছরের চেয়ে ভালো। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে লঞ্চে যেতে পারছেন। যাত্রীদের সুবিধার্থে এ বছর টার্মিনাল এলাকায় পন্টুন ও গ্যাংওয়ে বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচাতে লঞ্চে ও টার্মিনালে ছিটানো হচ্ছে মশা নিধনের ওষুধ। পাশাপাশি যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ক্যাম্প স্থাপনসহ টার্মিনালে রাখা হবে অ্যাম্বুলেন্স। যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে মোটরসাইকেল পরিবহন। যা গত রোজার ঈদ থেকে শুরু হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা প্রতি ঈদের জন্য কার্যকর থাকবে।
তিনি বলেন, প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। তবে এবার চাপ একটু বেশি কারণ বন্যায় রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পানি বাড়ায় অনেকেই নৌপথে স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারবেন। এছাড়া গত রোজার ঈদের সময় নৌপথ স্বস্তিদায়ক হওয়ায় এবার চাপ বেশি পড়ছে। আমরাও সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এজন্য লঞ্চের ফিটনেসের ভিত্তিতের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত দুই দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা লঞ্চের ফিটনেস, বয়াবাতি, পর্যাপ্ত বয়া রয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে টার্মিনাল থেকে লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত যাত্রী যাতে লঞ্চে উঠতে না পারে সে দিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। এজন্য আমাদের নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এবারই প্রথম নৌবন্দরে সিনিয়র সিটিজেন, গর্ভবতী মা, প্রতিবন্ধীদের জন্য টোল ফ্রি করা হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে লঞ্চে ও বন্দরে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সর্বোপরি আশা করছি এবারের ঈদযাত্রাও গত ঈদের মতো স্বস্তিদায়ক হবে বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ’র পরিবহন পরিদর্শক এস এম শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এপর্যন্ত সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ৭৭টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আরো ৩৫টি অপেক্ষমান। এগুলো রাত ১২টার মধ্যে ছেড়ে যাবে। এছাড়া সারাদিন দেশের বিভিন্ন রুট থেকে ৭৩টি লঞ্চ সদরঘাটে ভিড়েছে। সেগুলো কাল যাবে। তবে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকলে রাতেও দুই একটি যেতে পারে। সব মিলিয়ে আজ আমাদের এখান থেকে ১২০টির মতো লঞ্চ ছেড়ে যাবে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং হচ্ছে। আশা করছি যাত্রীরা নিরাপদে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৯
জিসিজি/জেডএস