শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের নানাখি উত্তরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ও স্থানীয় মসজিদের সভাপতি।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে স্থানীয় বাজারে সয়াবিন তেলের ব্যবসা করে আসছিলেন বাদশা। গত সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে সোনারগাঁও থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ ব্যবসার কাগজপত্র দেখার নামে বাদশার দোকান থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে যান। পরবর্তীতে শুক্রবার (৯ আগস্ট) কনস্টেবল তুষারকে সঙ্গে নিয়ে মাসুদ পুনরায় সাদা পোশাকে ওই দোকানে যান। সে সময় বাদশার ছেলে মিঠু দোকানে বসা ছিলেন। মাসুদ ও তুষার মিঠুর কাছেও ব্যবসাসংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চান।
পরে কাগজের খোঁজে মিঠু বাবাকে ফোন দিলে তার দোকানে পৌঁছাতে দেরি হয়। দোকানে গেলে দুই পুলিশ আবারও বাবা-ছেলের কাছে টাকা দাবি করলে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। পরে পুলিশ সদস্যরা বাদশা ও মিঠুকে মারধর করতে শুরু করেন। এরই এক পর্যায়ে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বাদশা। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
এদিকে এলাকায় বাদশার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী নয়াপুর-পঞ্চমীঘাট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় তারা অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করে স্লোগান দিতে থাকে। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বাদশাহর ছেলে মিঠু অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবারে বিকেলের দিকে সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় একজন ও পুলিশের পোশাকে তুষার নামে আরেকজন আমাদের দোকানে আসেন। তারা আমার কাছে কাগজপত্র দেখতে চাইলে আমি সে সব বাবার কাছে আছে বলে জানাই। এক পর্যায়ে তারা আমার কাছে টাকা দাবি করেন। পরে আমি বাবাকে ফোন দিলে বাবা দোকানে আসেন ও দুই পুলিশ তার কাছেও টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে তারা আমাদের মারধর শুরু করলে বাবা আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান।
গ্রামের ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম ও আবু সুফিয়ান জানান, সোনারগাঁও থানাপুলিশ ও তালতলা ফাঁড়ি পুলিশের চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আমাদের ব্যবসা করা কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। যে কোনো কিছুর অজুহাতেই তারা আমাদের কাছে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলেই মারধর ও মামলার হুমকি দেয়। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা জানান, আমি ঘটনা শুনে এলাকায় গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ভাষ্য মতে, পুলিশের মারধরে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে অভিযুক্ত এএসআই মাসুদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, এএসআই মাসুদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘটনা আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৯
এইচজে