ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সড়ক-নৌ-আকাশপথে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধের দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৯
সড়ক-নৌ-আকাশপথে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধের দাবি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একইসঙ্গে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও অদক্ষ চালক অপসারণ করে নিরাপদ, নির্বিঘ্ন ও দুর্ঘটনামুক্ত ঈদযাত্রা নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।

শনিবার (১০ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ সংক্রান্ত ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো- সড়ক, নৌ ও আকাশপথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ;  পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে চাদাঁবাজি বন্ধ; সড়ক-মহাসড়কের ওপর বসা পশুর হাট-বাজার উচ্ছেদ করা।

টোলপ্লাজাগুলোর সবকটি বুথ চালু করে দ্রুত গাড়ি পাসিং এবং যানজট হয় এমন এলাকায় দ্রুত গাড়ি পাসিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া। মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ; বেপরোয়া বাইকারদের নিয়ন্ত্রণ করা।

ফুটপাত পরিষ্কার রেখে পথচারীদের হাঁটার পরিবেশ নিশ্চিত ও নিরাপদে রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করা।  দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্পিডগান ব্যবহার, উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বন্ধ, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ, মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, প্যাডেলচালিত রিকশা, অটোরিকশা, নছিমন-করিমন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, রেলপথে টিকিট কালোবাজারি বন্ধ; ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সড়ক মহাসড়ক প্রতি ইঞ্চি অবৈধ দখল ও পার্কিং মুক্ত করা এবং নৌ-পথে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক বলেন, এ ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ৫ লাখ, দেশব্যাপী এক জেলা থেকে অপর জেলায় যাতায়াত করবে আরও প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ যাত্রী। সব মিলিয়ে ১২ দিনে প্রায় ৪ কোটি ৫৫ লক্ষ যাত্রীর ২৭ কোটি ট্রিপ যাত্রী ঈদ যাত্রার বহরে থাকবে।  

সড়ক পথে ফিটনেসবিহীন ট্রাকে পশু বহন, ফিটনেসবিহীন বাসে যাত্রী বহনের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। একদিকে বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের কারণে যানবাহনের গতি কমায় ধীরগতির কারণে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে থেমে থেমে যানবাহন চলছে। অন্যদিকে মানবসৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজির কড়া নিদের্শনা উপেক্ষা করে পথে পথে পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজির কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে কৃত্রিম যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও দেশের সড়ক-মহাসড়কে এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে পশুরহাটের কারণেও কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

‘রেলপথে টিকিট কালোবাজারি ও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়ছে বেশিরভাগ ঘরমুখো যাত্রীরা। এছাড়া এবারও অভ্যন্তরীণ রুটে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ বাড়তি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে  আকাশপথের যাত্রীদের। ঈদকেন্দ্রীক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে সীমিত পরিসরে প্রতীকীভাবে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মনিটরিং টিমের কার্যক্রম থাকলেও আকাশপথের ভাড়া নৈরাজ্য প্রতিরোধে আজও ভ্রাম্যমাণ আদালত, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, দুদক বা মনিটরিং টিমের কার্যক্রম নেই। ’

তিনি আরও বলেন, এদিকে নৌ-পথে দুর্যোগপূর্ণ মৌসুম চলছে। প্রতিবছর ঈদে ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটে। সরকারের নিয়োজিত ইজারাদাররা অস্বাভাবিক যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত টোল আদায়ের নামে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। দুর্যোগ মাথায় নিয়ে প্রতিটি লঞ্চে ধারণক্ষমতার প্রায় তিন থেকে চারগুণ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে এপথে ঈদযাত্রায় যাতায়াত চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।  

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত ঈদুল ফিতরের ন্যায় এবারের ঈদে একটি লম্বা ছুটি থাকলেও এই ছুটিটি পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু গার্মেন্টসসহ বেসরকারি খাতে অসহযোগিতা, পরিকল্পনাহীনতা ও অদূরদর্শিতার কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ঈদকে কেন্দ্র করে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে ভাড়া ডাকাতি চলছে। রিকশা, অটোরিকশা, বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার, লঞ্চ, বিমান সর্বত্র যে যার মতো ভাড়া আদায় করছে।  

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, এই সরকারের আমলে বিগত ১১ বছরে ২২টি ঈদ হলেও সরকারের কোনো সঠিক ব্যবস্থাপনা দেখছি না। ফলে ভাড়া নৈরাজ্য এবং যানজটে মানুষকে কষ্ট পেতে হচ্ছে।

গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ ও বারভিটার সভাপতি আবদুল হক, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামন শরীফ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৯
এমআইএইচ/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।