রোববার (১১ আগস্ট) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের ছাদে চড়ে ঢাকা ছাড়তে দেখা যায় যাত্রীদের। শুধু ছাদ-ই নয়, দরজার রেলিং, দুই বগির মাঝের জায়গা, এমনকি চালকের বগির রেলিংয়েও ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষকে।
দুঃস্বপ্নের এই যাত্রায় সুঠাম যুবক থেকে শুরু করে অংশ নিয়েছেন শিশু-নারীরাও। ঝুঁকির খেসারত যে জীবন দিয়ে দিতে হতে পারে তা জেনেও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের ‘স্বপ্ন’কে ছাদে চড়িয়েছেন তারা।
রাজধানীর একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির কর্মকর্তা নূরে আলম। যাবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তাই সকাল সকাল চেপে বসেছেন চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতীর ছাদে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সারাবছর গ্রাহকদের দেশে-বিদেশে ভ্রমণের বিভিন্ন বিষয়ের ব্যবস্থা করে থাকি। কিন্তু নিজের সময়ে এসে ট্রেনের টিকিট আর করতে পারিনি। যানজটের কথা চিন্তা করে বাসে যাচ্ছি না। দেখা যাবে আজ বাসে উঠলে কাল ঈদের নামাজ রাস্তায় করা লাগতে পারে। প্রতিবারই এমন হয় আর প্রতিবারই ভাবি যে এবার বাড়ি যাবো না। কিন্তু মা যখন ফোনে যেতে বলে তখন আর না গিয়ে থাকতে পারি না।
এভাবে যে যাচ্ছেন বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাহলে কেন যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে নূর বলেন, সবইতো বুঝি, কিন্তু কি আর করার। কোনোবারই এধরনের বড় মাপের দুর্ঘটনা ঘটেনি; এটুকুই সাহস যোগায়। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা তো নেই। যেভাবেই হোক, যেতে হবে।
আবার দুই সন্তান স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই ছাদে উঠেছেন রিকশাচালক আনসার আলী। তিনি বলেন, বাড়িত লোকজন আছে। তাই বাড়িত গিয়া ঈদ করুম। আমরা গরিব মানুষ। আমগো তো এমনেই যাইতে হইব।
প্রভাতীর ছাদে যখন যাত্রীরা উঠছিলেন তখন পাশেই দাঁড়ানো রেল পুলিশের কনস্টেবল ফারুক। যাত্রীরা এভাবে উঠছেন তবুও পুলিশ বাধা দিচ্ছে না কেন জানতে চাইলে ফারুক বলেন, এত মানুষ কয়জনকে থামাব? একদিকে একজনকে বললে অন্যদিকে আরেকজন ওঠে।
ছাদে ওঠার এমন ঝুঁকিপূর্ণ অনুশীলন বন্ধ করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরাওতো চাই না যে যাত্রীরা এভাবে যাক। এভাবে ট্রেন চললে আমাদের ট্রেনেরও ক্ষতি হয়। যাত্রী ওঠানামায় বাড়তি সময় ব্যয় হয়। ট্রেন ধীরে চলে, ফলে শিডিউল মেলাতে হিমশিম খেতে হয়। সর্বোপরি যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি থাকে। গত শুক্রবার বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে খুলনাগামী যে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয় তার অন্যতম কারণ ছিল বগির ওপরে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ। তবে সড়ক পথের থেকে ট্রেনে যানজট কম বলে এত মানুষ ট্রেনেই যেতে চান। আসলে যাত্রীরা নিজেরা যেদিন থেকে এভাবে আর যেতে চাইবেন না, সেদিন এই সমস্যার সমাধান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৯
এসএইচএস/জেডএস