ঢাকা, সোমবার, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ডেঙ্গুর মরসুমে ঈদ

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৯
ডেঙ্গুর মরসুমে ঈদ

ঢাকা: ব-দ্বীপের বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তের বাংলাদেশ। এখানে এ ছয়ের বৃত্ত। দু’মাস পর পর ঋতুর বদল হয়। প্রকৃতি সাজে নতুন রূপে।

গ্রীষ্মের রুদ্ররূপে শীতল পরশ দিতে বর্ষা নামে, বাদলের মুখরিত দিন, আহা! দূর দূরান্ত থেকে পলি বয়ে এনে কৃষকের মাঠ করে উর্বর। ফসলে ভরে উঠে কৃষকের গোলা।

কৃষানির মুখে অমলিন হাসি। সময় গুণে কালের খেয়ায় ভেসে শীতের আগমনী বার্তা দেয় ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু। সকালে কোনো দিন হেঁটেছেন খালি পায়ে? অলস সকাল হয়তো ভুলেই ফেলে এসেছেন! তবে মানুষ হিসেবে আমরা ভুল করলেও প্রকৃতি ভুল করে না। শীতের শীতল পরশে ঢেকে দেয় প্রকৃতি। মাঠে সোনালী ধান, সেই ধানে শীতের পিঠা-পুলিতে মুখ ভরেছে গ্রামীণ জীবনে। শহুরে জীবনে এসব কথা এখন কাগজে লেখা গল্পই মনে হয় বৈকি!

গ্রামের মানুষ শহরমুখী, ঢাকাতেই গন্তব্য বেশিরভাগের। লাখ লাখ মানুষ আসছে ঢাকায়। শহর বাড়ছে, বাড়ছে চারপাশে, আকাশ ছুঁয়েছে; বাসভবন, কলকারখানা। ঢাকাকে করে ফেলেছি কারাগার। শহরের কোনো কোনো অংশ কারাগারের কনডেম সেল যেন। ফুটপাতে হাঁটতে যাবেন, সেটা দখল। মানুষ গিজগিজ করছে, ফুটপাত ছেড়ে নেমেছে রাস্তায়। যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা করে হাঁটে মানুষ। ফুটপাতে হাঁটতে না পেরে রাস্তায় নেমে যানবাহনের গতি কমিয়ে দেই আমরা শহুরে নাগরিক। কোথাওবা ফুটপাতে উঠে দুই চাকার মোটরবাইক। আমরা হাঁটবো কোথায়, ঢাকার সব জায়গা তো আর গুলশান কিংবা বনানী না।

এতো গেল সড়কের কথা। আবাসিক এলাকায় ঢুকে কোথাও কোথাও গলিতে ময়লা, কোথাও ময়লার স্তুপ। বাসাবাড়ির গৃহস্থালির কাজের পানির ড্রেন, পয়োনিষ্কাশনের ড্রেন উপচে পড়ে। এখানে হাঁটা দায়। পরিচ্ছন্ন কর্মী চেষ্টা করেও ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার করতে পারে না। পলিথিন, বোতল কোথাও ব্যবহৃত কনডম-ন্যাপকিন এলোমেলো ছড়ানো। আর পুরান ঢাকায় দিনের বেলার সূর্যটাও দেখা ভার গলির রাস্তায়। একতলা পরই বাড়ির অংশটা বাড়িয়ে দিয়ে আরাম করার বারান্দা বানিয়েছি আমরা। সেই আমরাই গর্ব করে বলি- ঢাকায় আমার বাড়ি আছে এক, দুই, তিনটা!

এটা চোখে দেখা সামনের অংশ। অন্দরমহলের অবস্থাটা কি? বাড়ির পেছনে, ডানে কিংবা বামে জানালা দিয়ে আমরাই শহুরে নাগরিকরা চিপস খেয়ে প্যাকেট ফেলে দেই। ডাব পানি খেয়ে খোসা ফেলে রাখি। আমরা পরিবেশ নষ্ট করছি, প্রকৃতি কি থেমে থাকবে আমাদের জন্য? 

গেল কয়েক বছর প্রকৃতিও বৈরি হয়ে উঠেছে। শীতকালে গরম, বর্ষাকালে খরা। এই বৃষ্টি হয়তো খানিক পরেই কাঠফাটা রোদ। মশা-মাছির ভন ভন চারদিক। এমন পরিবেশ একদিনে হয়নি, দিনে দিনে আমরা বানিয়েছি। এই শহরের বাপ-মা আছে, আছে সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের দুর্বলতা কিছু থাকলেও কিন্তু আমরা সব দোষ মেয়রদের উপর ঢেলে দেই। নিজে কতটাইবা সচেতন হয়েছি। আমাদের সে অসচেতনতাই হয়তো কাল হয়েছে। বিষাক্ত হয়েছে পরিবেশ, পরিণতি এডিস মশার অবাধ প্রজনন। ভয়ংকর ডেঙ্গুজ্বর।

ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির মধ্যে এবারের ঈদ, মানে কোরবানির ঈদ। নিয়ম রক্ষার ঈদ উদযাপন করছি আমরা। রাজধানীর হাটে হাটে কমবেশি সবাই যাচ্ছেন বিত্তবানেরা। সামর্থ্য অনুযায়ী কিনছেন গরু, ছাগল, দুম্বা। দু’একজন উঠ কিনে কোরবানি দেবেন। সবার কোরবানি কবুল হবে সেটাই কাম্য।

কিন্তু কেন জানি নাই নাই ভাব। গরু আছে, ছাগল আছে, তবু কী যেন নেই। বন্যায় কয়েক জেলা ভেসে গেছে ঈদের আগে, ক্ষতি হয়েছে সড়কের। তার পরিণতি সড়ক পথে দীর্ঘযাত্রায় দীর্ঘশ্বাস। রেল পথেও সিডিউল বিপর্যয়। কোনো ক্ষেত্রে একদিন পর ট্রেন ছাড়ছে। নাগরিকরা আমরা সবই তা মেনে নিচ্ছি! কারণ ঈদ। কিন্তু ডেঙ্গুজ্বর মেনে নেব কীভাবে। মহামারি ঘোষণা না হলে ভয়াবহ, মারাত্মক ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিস্থিতি। ঢাকায়, ঢাকার বাইরে- সবখানে। সরকারি হিসাবে প্রায় অর্ধশত, বেসরকারি হিসাবে শত লোক মারা গেছে। আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ত্রিশ হাজার। আক্রান্তদের বেশিরভাগ শিশু, নারী। মরেছে তারাই বেশি। আহারে...। স্যোশাল মিডিয়ায় কতই না হাহাকার, ডেঙ্গু হয়েছে যার।

ঈদের দিন এই নগরে হাজার হাজার পশু কোরবানি হবে। নিয়ম মেনে কোরবানির পশুর বর্জ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করি। আসুন, পশু কোরবানির সঙ্গে মনটাও কোরবানি দেই। নিজের মনটা পরিস্কার করি, সঙ্গে নগরটাও। কারণ এ নগরেই আপনার-আমার সন্তান বেড়ে উঠবে। ডেঙ্গু মুক্ত হোক আগামীর শহর, আপনার-আমার সন্তান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৯
এমআইএইচ/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।