ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা প্রত্যেক ঈদগাহ মাঠে প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করেন। অবশ্য অনেক ঈদগাহ মাঠে প্রধান ফটক ছাড়াও প্রবেশের একাধিক পথ দেখা যায়।

অবশ্য ঈদগাহে আসা মানুষগুলো তাদের বঞ্চিত করেননি। যে যার সাধ্য মতো এসব অভাবী ছিন্নমূল মানুষদের সাহায্য সহযোগিতার চেষ্টা করেছেন। অনেকেই নিজ হাতে প্রত্যেকের হাতে টাকা তুলে দেন। আবার কেউ কেউ শিশু-কিশোরের হাত দিয়ে ওইসব অভাবী ছিন্নমূল মানুষের হাতে তুলে দেন টাকা। যেখানে ধনী-গরিবের কোনো ব্যবধান ছিল না।
সোমবার (১২ আগস্ট) সকালে বগুড়া শহরের বেশ কয়েকটি ঈদগাহ মাঠে সমাজের ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে বিত্তবানদের এভাবে অর্থ বিলিয়ে দেওয়ার দৃশ্য নজর কাড়ে।
ঈদগাহে প্রবেশ পথের এক কোণায় হুইল চেয়ারে বসেছিলেন এক বয়স্ক ব্যক্তি। মাথার চুল চেহারায় ছিল উস্কখুস্ক ভাব। মুখটা দেখাচ্ছিল মলিন। এলোমেলো ছিল পরনের পোশাক। এই ব্যক্তির নাম আজাহার আলী। তার স্ত্রীর নাম অমিছা বেগম। স্বামী অচল হয়ে পড়ায় সংসারের আয় উপার্জনের পথ একেবারে বন্ধ।
বাধ্য হয়ে অমিছাকে সংসারের হাল ধরতে হয়। বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যের দ্বারে দ্বারে তাকে প্রতিনিয়ত ঘুরতে হয়। এভাবে চলছে তাদের টানাটানির সংসার। ফলে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে সামান্য সাহায্য সহযোগিতা পেতে তারাও এসেছিলেন ঈদগাহে। তবে তাদের আসাটা ব্যর্থ হয়নি। অনেকেই তাদের সামর্থ অনুযায়ী সহায়তা করেন বলে বাংলানিউজকে এমনটাই জানালেন এই দম্পতি।
ঈদগাহে প্রবেশের প্রধান ফটকের একপাশ দিয়ে সারিব্ধভাবে বেশ কয়েকজন নারীকে বসে থাকতে দেখা গেলো। যাদের প্রত্যেকের সামনেই শোভা পাচ্ছিলো এক টুকরো কাপড়। তাদের কারো পরনে নতুনে পোশাক চোখে পড়েনি। ঈদগাহে আসা মানুষগুলো তাদের কাউকে বঞ্চিত করেননি। যার যার সামর্থ অনুযায়ী সমাজের এসব ছিন্নমূল অভাবী মানুষের হাতে সাহায্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেখানে বসেই জমিলা বেওয়া নামের এক নারীকে গভীর মনযোগ সহকারে টাকা গুণতে দেখা গেলো। মনে হলো তিনি অনেকগুলো টাকা পেয়েছেন।
এই নারী বাংলানিউজকে জানান, অনেক আগেই মারা গেছেন স্বামী। সন্তানরা বিয়ে করে পৃথক সংসার করেন। তাদের আর্থিক অবস্থাও ভাল না। তারা নিজেরাই ঠিকমতো চলতে পারেন না। এ অবস্থায় তারা মাকে আর কি দেখবেন। তাই নিজের বেঁচে থাকার চিন্তা নিজেকেই করতে হয়। ঈদগাহে এসে মানুষের সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে দারুণ খুশি জমিলা বেওয়া। ছিন্নমূল এই মানুষগুলো তাদের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় সবার জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করেন। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এ যেন ছিল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। যেখানে সবাই ছিল সমানে সমান।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি