ঢাকা, সোমবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুকে জানতে নেত্রকোনা শিশুসদনে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
বঙ্গবন্ধুকে জানতে নেত্রকোনা শিশুসদনে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, ছবি: বাংলানিউজ

কুমড়ি (নেত্রকোনা) থেকে ফিরে: বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্য একটি নাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। যাকে ছাড়া চিন্তাও করা যায় না স্বাধীন এ রাষ্ট্র বা একটি জাতির কথা। জীবন থেকে মৃত্যু অবধি দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির হৃদয়ে হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু। 

একমাত্র বঙ্গবন্ধুই বাঙালিকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করাসহ স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছেন। সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে তিনি জীবনে বহুবার কারাবরণ করেছেন, হয়েছেন নির্যাতিত।

জীবনের বেশিটা সময় কারাগারেই কাটিয়েছেন তিনি।  

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে শত্রুপক্ষের বুলেটে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাই একে একে প্রাণ হারান। বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেলও সেদিন ঘাতকের হাত থেকে রেহাই পায়নি। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা এবং কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ইতিহাসের পাতায় বাঙালি জাতির জন্য যা এক কলঙ্কিত অধ্যায়।

দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর এ ত্যাগ-অবদান যেন বৃথা না যায় সেইজন্য বঙ্গবন্ধুর সঠিক ইতিহাস জানাতে উদ্যোগ নিয়েছেন নেত্রকোণা সরকারি শিশু সদনের উপ-তত্ত্বাবধায়ক তারেক হোসেন।

নিজ খরচে জমানো টাকায় তিনি শিশুসদনের পরিত্যক্ত একটি কক্ষ পরিষ্কার করে সেখানে গড়ে তোলেছে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার।

তারেক হোসেন ভাষ্যমতে, দেশে একটি শ্রেণি রয়েছে যারা সবসময় বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার করতে ইতিহাস বিকৃত করতে চায়। সেই শ্রেণির কেউ যেন নতুন প্রজন্মকে ভুলপথে ধাপিত করতে না পারে সেই জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার গড়েছেন।

কর্নারটিতে বাংলাদেশের ইতিবৃত্ত তথা বঙ্গবন্ধুর ছাত্র, রাজনীতি ও ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ও তুলে আনার চেষ্টা করেছেন তিনি। ইন্টারনেট ও বিভিন্ন বই পড়ে কর্নারটি সাজিয়েছেন তারেক।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, চেতনার নাম হচ্ছে বঙ্গবন্ধু। সেই চেতনার স্বচ্ছ একটি রূপ তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে। বঙ্গবন্ধুর ছাত্র, রাজনীতি, সাংসারিক ও দেশ-বিদেশ ভ্রমণের বিভিন্ন মুহূর্তের বিষয় এ কর্নারে তুলে ধরা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট ছাড়াও রাখা হয়েছে যুদ্ধকালীন সময়ের প্রায় দুর্লভ মুহূর্তের ৫২টি ছবি।

সংরক্ষণ করা হয়েছে শতাধিক বই। যেসব বইয়ে বলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের কথা। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ রয়েছে আরও বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই।

অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘কারাগারে রোজনামচা’, শেখ হাসিনার লেখা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ ও ‘নির্বাচিত ১০০ ভাষণ’ বইগুলোর প্রতি নতুন প্রজন্ম তথা শিশু পরিবারের ছেলেদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে বলেও জানান উপ-তত্ত্বাবধায়ক।

তিনি জানান, দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের ছবি দিয়ে গ্যালারি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে রাখা বঙ্গবন্ধুর জীবন বা বাংলাদেশের ইতিহাস লেখাটি পড়লে বাঙালি জাতি বা দেশের ইতিহাস জানা কারও বাকি থাকবে না।

শোকের মাস আগস্টকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াত করছে শিশু পরিবারের সদস্যরা। হয়েছে রচনা প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ছেলেরা অংশ নিয়েছে প্রতিযোগিতায়।

এছাড়া বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সকালে শোকর‌্যালি, কোরআন তেলাওয়াত ও আলোচনা শেষে প্রতিযোগিদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

শিশু পরিবারের সদস্যরা জানান, শিশু সদনে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার করায় তারা বঙ্গবন্ধু ও দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছেন। মুক্তিযুদ্ধ কর্নারটি করার জন্য উপ-তত্ত্বাবধায়ক তারেক হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঈনউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শিশু সদনে মুক্তিযুদ্ধ কর্নারটি করায় নতুন প্রজন্ম দেশ সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।