ঢাকা, সোমবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরলো ২৩ প্রাণ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরলো ২৩ প্রাণ দুর্ঘটনা কবলিত বাস। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ফেনীতে পিকিনিকের বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আটজন, ফরিদপুরে চারজন, সিরাজগঞ্জে দু’জন, গোপালগঞ্জে একজন, বরিশালে একজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, টাঙ্গাইলে একজন, ভোলায় একজন ও ময়মনসিংহে দু'জন।

বাংলানিউজের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

ফেনী: সকালে ফেনীর লেমুয়া এলাকায় কক্সবাজারগামী একটি পিকনিকের বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আটজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন।

নিহতরা হলেন- বিক্রমপুরের অপু (৩৫), মিরপুরের ইকবাল (৩৮), মাদারীপুরের রিপন (৩০), নারায়ণগঞ্জের মুন্না খান (৩০), মিরপুরের শামীম (৩০), ছাগলনাইয়ার রাধানগর এলাকার শাহাদাত হোসেন (২৮) ও বিক্রমপুরের সুজন মিয়া। বাকি একজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।

এদিকে, আহতদের মধ্যে ১৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ফেনীর মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. শাহজাহান খান বাংলানিউজকে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ফরিদপুর: সকালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নওপাড়া এলাকায় দু’টি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয় বাসের অন্তত ৩২ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৩ জনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল (ফমেক) কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নিহতরা হলেন-বাসচালক ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার রওশন ফকির (৩৫), যাত্রী রাজবাড়ী সদরের মীরা কুণ্ডু (৬০)। অপরজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, নওপাড়া এলাকায় বরিশাল থেকে সৈয়দপুরগামী তুহিন পরিবহনের সঙ্গে ফরিদপুর থেকে টেকেরহাটগামী একটি লোকাল বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।  

এতে ঘটনাস্থলেই চালক রওশন ও যাত্রী মীরা কুণ্ডুর মৃত্যু হয়। এতে আহত ৩২ জনের মধ্যে ১৪ জনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ (ফমেক) হাসপাতালে আনা হলে সেখানে আরও একজনের মৃত্যু হয়। বাকীদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ওসি আতাউর।

এদিকে, দুপুরে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আব্দুস ছাত্তার মোল্লা (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মোটরসাইকেল চালক দেলোয়ার তালুকদার।

সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আব্দুস ছাত্তারের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ভোলা: সকালে ভোলায় মাহিন্দ্রচাপায় পারভেজ (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পারভেজ ভোলা-ইলিশা সড়ক এলাকার বাসিন্দা সাহাবুদ্দিনের ছেলে। সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।  

ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রেন ইনচার্জ রতন কুমার শীল বাংলানিউজকে জানান, সকাল ভোলা-ইলিশা সড়কে ভোলাগামী একটি মাহিন্দ্র ব্যারিস্টার কাচারি এলাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটিকে চাপায় দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু পারভেজের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক মাহিন্দ্রসহ চালক ফিরোজকে আটক করেছে।

ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ইনচার্জ রতন।

সিরাজগঞ্জ: বিকেলে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার কোনাবাড়ী এলাকায় যাত্রীবাহী চারটি বাসের চতুরমুখী সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী হানিফ পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস কামারখন্দের কোনাবাড়ী এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা ফাইভ স্টার পরিবহনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় পেছন থেকে ডিপজল ও এনা পরিবহনের দু'টি বাস হানিফ পরিবহনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে চতুরমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় হানিফ ও ফাইভ স্টার বাস দু’টি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দু'জনের মরদেহ উদ্ধার করে। এছাড়া এ দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০ জন আহত যাত্রীকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গোপালগঞ্জ: দুপুরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার গোপালপুর এলাকায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় তুহিন মোল্লা (৩২) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন তার স্ত্রী সাখি বেগম (২৫)।

কাশিয়ানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রকাশ সরকার বাংলানিউজকে জানান, কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া থেকে তুহিন তার স্ত্রী সাখিকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে গোপালপুর এলাকায় বিপরীত দিকে থেকে আসা একটি প্রাইভেটকার তাদের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তুহিন নিহত এবং তার স্ত্রী গুরুতর আহত হন।  

খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর আহত সাখিকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান এসআই প্রকাশ।  

ব‌রিশাল: দুপুরে ব‌রিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় বা‌সচাপায় আবুল হাসানাত রাসেল নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন অপর এক মোটরসাইকেল আরোহী।  

বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও‌সি) দিবাকর চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে জানান, দুপুরে উপজেলার নতুনহাট এলাকায় একটি বাস ওই মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহত দু'জনকে উদ্ধার করে ব‌রিশাল শের-ই-বাংলা মে‌ডিক্যাল কলেজ (শেবা‌চিম) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অপরজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  

ময়নাতদন্তের জন্য রাসেলের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ও‌সি দিবাকর।

কিশোরগঞ্জ: সকালে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় ট্রাকচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন।

নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নেয়ামতপুর এলাকার বাসিন্দা ও অটোরিকশারচালক জামাল মিয়া (৩০), কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ভয়রা গ্রামের শামু মিয়ার ছেলে তোফাজ্জ্বল মিয়া (২২) ও একই এলাকার মুসলিম মিয়ার ছেলে উমর ফারুক (১৮)।

আহতরা হলেন- ইটনা উপজেলার ভয়রা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দুল কাদির (৩০), একই গ্রামের বিশ্বেশ্বরের ছেলে পরিমল (২২), একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে সিরাজ উল্লাহ (৫০), একই উপজেলার ডুইয়ারপাড় গ্রামের রজব আলীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৪৫)। আহত চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কটিয়াদী হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ (পরিদর্শক) নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ঘাতক ট্রাকটি আটক করা হলেও চালক পালিয়েছেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

টাঙ্গাইল: সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় পিকআপ ভ্যানচাপায় ইসতিয়াক আহমদ (১৭) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। ইসতিয়াক সখীপুর পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাকিল আজাদের ছেলে। সে টাঙ্গাইলের সরকারি মুজিব কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল।  

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অমির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সকালে মোটরসাইকেলে করে সখীপুর থেকে নলুয়া যাচ্ছিলো ইসতিয়াক। পথে বোয়ালী উত্তরপাড়ায় এলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যান তার মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

ময়মনসিংহ: দুপুরে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ দু’জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।  

নিহত দু’জন হলেন- জায়েদ (৬) ও সিরাজুল ইসলাম (৪৫)। জায়েদ শেরপুরের কালিবাড়ী চেঙ্গুরিয়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে এবং সিরাজুল শেরপুর সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা।  

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরাত হোসেন গাজী বাংলানিউজকে জানান, ঢাকাগামী সোনার বাংলা পরিবহনের একটি বাস ও শেরপুরগামী সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই শিশু জায়েদ মারা যায়। পরে আহতদের উদ্ধার করে ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক সিরাজুল, তামান্না (২৬), বেগম (৩৫), মালেকা (৩০) ও নিহত শিশুর মা কাজলী বেগমকে (৩৬) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠান। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সিরাজুল মারা যান।  

এ ঘটনায় ঘাতক বাসটি আটক করা হলেও চালক পালিয়েছেন বলেও জানান ওসি ইমরাত।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।