ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মেট্রোরেলের অগ্রগতি মাত্র ৩৪.৫৮ শতাংশ, দেরি তদন্তেও

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
মেট্রোরেলের অগ্রগতি মাত্র ৩৪.৫৮ শতাংশ, দেরি তদন্তেও ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০১২ সালের জুলাই মাসে। দেখতে দেখতে গড়িয়েছে অনেকটা সময়। সব বাধা জয় করে এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেলের কাজ। তবে, প্রকল্পের অগ্রগতি মোটেও আশানুরূপ নয়।

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথ ও স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের জুনে। তবে, সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে সরকার।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের পুরো অংশটিই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বরই উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার উড়াল রুট খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সব মিলিয়ে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মোট অগ্রগতি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা।

দীর্ঘ ছয় মাস পর প্রকল্পের ধীর অগ্রগতি তদন্তে মাঠে নামছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) টিম। চলতি বছরের ২৪ আগস্ট আইমইডির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত) মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে।

আইমএমইডি সূত্র জানায়, প্রকল্পের অগ্রগতি বৃদ্ধি ও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি-না দেখতেই মাঠে নামছে আইমইডি। প্রকল্প এলাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে কি-না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। মেট্রোরেল প্রকল্প প্রতি তিন মাস পর পর পরিদর্শন করার কথা আইএমইডির। কিন্তু, দীর্ঘ ছয় মাস পর পরিদর্শনে যাচ্ছে তারা। সবশেষ চলতি বছরের মার্চে মেট্রোরেল প্রকল্প পরিদর্শন করেছিল আইএমইডি।
 
এ প্রসঙ্গে আইএমইডির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, নানা কারণে মেট্রোরেল প্রকল্প পরিদর্শন করা হয়নি। এটা আগের মহাপরিচালক (ড. মো. মশিউর রহমান) ভালো বলতে পারবেন। তবে নতুন মহাপরিচালক (মো. কামরুজ্জামান) তিন মাস পর পর প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের অগ্রগতি যেন ঠিক থাকে, তা দেখভাল করার জন্য এখন থেকে তিন মাস পর পরই পরিদর্শন করা হবে। প্রকল্প এলাকায় ধুলোবালি-জটলার সমস্যা হচ্ছে কি-না, তা দেখা হবে।
 
আইএমইডির সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. মশিউর রহমান বর্তমানে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) যুগ্ম-প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন।
 
দীর্ঘদিন মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শন না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তিন মাস পর পর মেট্রোরেল এলাকা পরিদর্শন করলে কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায় না। সে জন্যই দেরিতে বা বছরে দু’বার পরিদর্শনের চিন্তা করেছি। এখন আমি আর আইএমইডিতে নেই। পরিদর্শনের কী অবস্থা, বলতে পারবো না।

জানা যায়, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত মেট্রোরেলের সার্বিক গড় অগ্রগতি ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
 
রাজধানীর যানজট নিরসন, নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এ এলাকায় বসবাসকারী লাখো মানুষ মেট্রোরেল ব্যবহার করে গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন সাচ্ছন্দ্যে। প্রকল্পে মোট ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে কোচ। এটি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে যাত্রী নিয়ে। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।  

মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক। রাস্তার মাঝ বরাবর উড়ালপথে চলবে মেট্রোরেল। স্টেশন হবে প্রায় দোতলা সমান উঁচু আর দৈর্ঘ্য ১৮০ মিটার। স্টেশনের নিচতলায় থাকবে টিকিট বিক্রয়কেন্দ্র ও স্বয়ংক্রিয় প্রবেশদ্বার। দু’পাশ থেকে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করতে পারবে এ স্টেশনে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও ইসলামিক সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে স্টেশনগুলোতে। ১৬টির মধ্যে তিনটি হবে ‘আইকনিক স্টেশন’, বাকিগুলো সাধারণ। আইকনিক স্টেশনগুলোর অবস্থান উত্তরা (দক্ষিণ), বিজয় সরণি ও মতিঝিলে।

স্টেশনের আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে প্লাটফর্মের ছাদ। দৃষ্টিনন্দন ধবধবে সাদা রঙের ধনুকাকৃতির ছাদ দু’দিক থেকে সরল রৈখিকভাবে একে অন্যকে ভেদ করে যাবে, যা অনেকটা মসজিদের মিনার ও শামিয়ানার সংমিশ্রণ। এর মধ্যে কয়েক জায়গায় স্বচ্ছ কাচ দেওয়া থাকবে, যাতে সূর্যের আলো ঢুকে উভয় পাশের প্লাটফর্মে ছড়িয়ে দিতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৯
এমআইএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।